× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শতকোটির খামার এখন ‘ভূতের বাড়ি’

শরীফ স্বাধীন, মাগুরা

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৯ এএম

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:০২ পিএম

অযত্ন অবহেলায় আগাছা জন্মেছে হাঁস পালনের বেশিরভাগ শেডে বাঁয়ে। জৈব নিরাপত্তা উপেক্ষা করে খামারের ভিতর গরু- ছাগলের বিচরণ। সম্প্রতি মাগুরা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে। প্রবা ফটো

অযত্ন অবহেলায় আগাছা জন্মেছে হাঁস পালনের বেশিরভাগ শেডে বাঁয়ে। জৈব নিরাপত্তা উপেক্ষা করে খামারের ভিতর গরু- ছাগলের বিচরণ। সম্প্রতি মাগুরা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে। প্রবা ফটো

জনবল সংকট ও নানা অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে মাগুরা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার। দুই দফায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রতিষ্ঠানটি এখন অনেকটা নামসর্বস্ব। যাত্রার শুরু থেকেই হাঁসের বাচ্চা সরবরাহ করতে গলদঘর্ম হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি বর্তমানে ডিমের অভাবে বন্ধ রয়েছে ইনকিউবেটর মেশিন। আগাছা ও মরিচায় নষ্ট হচ্ছে খামারটির বিভিন্ন শেড। 

স্থানীয় একাধিক খামারি অভিযোগ করে বলেন, খামারে কোনো বাচ্চা উৎপাদন হয় না। বরং খামার কর্তৃপক্ষ অন্য জেলা থেকে বাচ্চা এনে সরবরাহ করায় গুনতে হয় অতিরিক্ত দাম। পাশাপাশি নষ্ট হয়ে পড়ে বাচ্চার গুণগত মান। এর ফলে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

জেলার শ্রীপুর উপজেলার টুপিপাড়া গ্রামের খামারি গিয়াসউদ্দীন বলেন, অফিস খুলনা খালিশপুর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এনে আমাকে এক দিনের বাচ্চা দিয়েছিল। এই বাচ্চা নিয়ে আমি খামারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কারণ এক দিনের বাচ্চা ৮০-৯০ কিলোমিটার দূর থেকে আনলে সেগুলোর অবস্থা ভালো থাকে না। 

খামারটির পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নের বেগ পাড়ার বাসিন্দা লাভলু শিকদার জানান, হাঁসের খামারে কোনো বাচ্চা বিক্রি নেই। সারাক্ষণ তালাবদ্ধ থাকে। কখনও প্রবেশ করাও যায় না। 

সদর উপজেলার আলমখালী বাজারের বাসিন্দা আনিচুর রহমান বলেন, আমি মাগুরা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার থেকে ৫০০ হাঁসের বাচ্চা নিয়েছিলাম। সেগুলো দর্শনা জেলা থেকে এনে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে শুধু ডিম বিক্রি চলে। বাচ্চা ফোটানো হয় না। কেউ চাহিদা দিলে বাইরে থেকে এনে দেওয়া হয়। 

জানা যায়, সদর উপজেলার কছুন্দী ইউনিয়নের রামনগর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে অবস্থিত ‘মাগুরা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারটি’ ২০০২ সালে ‘মাগুরা হাঁস পালন কেন্দ্র’ নামে যাত্রা শুরু করে। প্রথম ধাপের ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় খামারটি চালু হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছর অলস পড়ে থেকে ২০১৩ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও খামারটি রাজস্ব খাতে স্থান্তারিত করা হয়। এ অবস্থায় নতুন করে ২০১৪ সালে আরও প্রায় ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ‘আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার’ নামে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

খামারিদের অভিযোগের সত্যতা জানতে সম্প্রতি খামারে সরেজমিন অনুসন্ধানে যান এই প্রতিবেদক। দেখা যায়, খামারটির দুটো গেটই তালাবদ্ধ। অপেক্ষার পর ভেতরে প্রবেশ করে জানা যায় খামারের দায়িত্বরত সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খোদেজা আকতার ঢাকায় আছেন ট্রেনিংয়ে। খামারে থাকা ৭টি আধুনিক শেড ব্যবহার না হওয়ায় বেশির ভাগ অবকাঠামো পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম। কোথাও চোখে পড়েনি জৈব নিরাপত্তার বালাই। উল্টো সেখানে অবাধে গরু-ছাগল বিচরণ করতে দেখা যায়। 

কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডা. খোদেজা আকতার ছাড়া খামারে কর্মরত আছেন আর মাত্র চারজন। এর মধ্যে তিনজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও একজন অফিস সহকারী। কর্মচারী তিনজন থাকলেও অফিস সহকারী জিয়াউর রহমান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে দুই দিন আসেন। 

মোবাইল ফোনে ডা. খোদেজা আকতারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, খামারে বাচ্চা উৎপাদন হয়। কিন্তু শেডে কিছু বয়স্ক হাঁস ছাড়া কোথাও বাচ্চা পাওয়া যায়নি। বরং ডিমের অভাবে ইনকিউবেটর মেশিন কখনও সচল করা যায়নি। 

কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা লোকবল সংকটের কথা স্বীকার করেন। তারা জানান, তিনজন কর্মচারী দিয়ে বাচ্চা উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখা কঠিন। তবে তারা ইনকিউবিটর মেশিন সচল বলে দাবি করেন। তবে বাচ্চা বরাদ্দ পাওয়া খামারিদের তালিকা চাইলে ডা. খোদেজা আকতারের অফিস খুলে দীর্ঘক্ষণেও সেটি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন কর্মচারী জাহিদুল। 

এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিহির কান্তি বিশ্বাস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আপনার দেওয়া অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। অবশ্যই খামারিরা ভেতরে প্রবেশ করবে এবং খামার ঘুরে দেখবে। কারণ খামারিরা এটা দেখে উদ্বুদ্ধ হবে এবং পরিকল্পিত খামার তৈরি করা তাদের জন্য সহজ হবে। আর খামারে বাচ্চা উৎপাদনের বিষয়ে জেলা অফিসে কোনো তথ্য নেই। পরিচালক (উৎপাদন) যশোর অফিসে হাঁস খামার থেকে এর রিপোর্ট পাঠানো হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা