সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৩০ পিএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৭ পিএম
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া-সাতকানিয়া সীমান্ত এলাকায় বন বিভাগের লোকজন কৃত্রিম হ্রদের বাঁধ কেটে দেওয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় আটশ একর জমির ফসল, বাড়িঘর ও দোকানপাট। সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে সোনাইছড়ী খালে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্লুইস গেট।
সোনাকানিয়ার মাছুন্না মুড়ার কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘বাঁধ কেটে দেওয়ায় শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে লেকের পানিতে আমার তিন কানি জমির বোরো ও এক কানি সবজিক্ষেত সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। পানিতে সর্বনাশ হয়েছে আমার মতো আরও অনেকের।’
তিনি উচ্চ সুদে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে খরচ করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘লাভের আশা তো গেল। এবার উল্টো কীভাবে ঋণ শোধ করবে তা নিয়ে চিন্তিত।’
বন বিভাগ বলছে, কিছু দুর্বৃত্ত অবৈধভাবে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে ওই লেকটি গড়ে তুলেছিল। তাই তারা সেটা অপসারণ করেছে। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন বিভাগের লোকজন অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ কেটে দিয়েছে। এতে সোনাকানিয়া ইউনিয়নের আছাদতলী, সাইরতলীর ৬০টির অধিক মাটির ঘর, টিনশেড ও পাকাঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। হাট-বাজার, স্কুল, মাদ্রাসা, গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে চলে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। হঠাৎ পানিতে নষ্ট হয়েছে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকায় রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ভাঙা ঘর থেকে কাদামাখা আসবাবপত্র বের করছে। সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। আত্মীয়স্বজনরা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে আসছে।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বাঁধ কেটে দেওয়ায় পানি লোকালয়ে প্রবেশের ফলে সোনাকানিয়ায় প্রায় ৭০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী রবিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে জানানো হবে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিরূপণ করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস।
বাঁধ কাটার কথা স্বীকার করেছে বন বিভাগ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (পদুয়া) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ৭০ ফুটের মতো বাঁধ কেটেছি। পানির তোড়ে আরও কিছু অংশ ভেঙে গেছে।’