ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০৮ পিএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪১ পিএম
অর্থোডক্স চা।
স্বাদে, গন্ধে অনন্য। রঙে উজ্জ্বল। স্বাস্থ্যের জন্যও বিশেষ উপকারী। ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে হাতে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বলে এর নাম ইংরেজিতে অর্থোডক্স। সম্প্রতি এর কদর বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। এ বছর একসঙ্গে দুই হাজার কেজি অর্থোডক্স চায়ের অর্ডার এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক জানিয়েছেন, ‘প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও গত মৌসুমে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেকর্ড পরিমাণ ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বিশ্বমানের অর্থোডক্স টি রয়েছে, যা চা শিল্পের ইতিহাসে আমাদের এক বিশাল অর্জন। আমরা ইতোমধ্যে লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ থেকে লন্ডনের বাজারের জন্য দুই হাজার কেজি অর্থোডক্স টির অর্ডার পেয়েছি।’
১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে প্রথম বাণিজ্যিক চা উৎপাদন শুরু হয়। সে সময় হাতেই চা প্রক্রিয়াজাত করা হতো। কাঁচা পাতা তুলে রোদে শুকিয়ে বাজারজাত করা হতো। পরে চা বাগানগুলোয় কারখানা স্থাপন করে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কালো চা প্রক্রিয়াজাত করা হতো। গত শতকের আশির দশকে আবার হাতে চা প্রক্রিয়াজাত করা শুরু হয়। কিন্তু কদর ছিল না খুব একটা। তবে যান্ত্রিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা চায়ের চেয়ে অধিক স্বাদ ও গুণের জন্য ইউরোপের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
সূত্রমতে, ২০০৫ সালে প্রথম ইংল্যান্ডের বাজারে ৬০ কেজি অর্থোডক্স টি রপ্তানি করা হয়। প্রতি কেজি চা বিক্রি হয় বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা। যেখানে যান্ত্রিকভাবে প্রক্রিয়াজাত কালো চায়ের দাম ছিল কমবেশি ১০০ টাকা।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বহুমুখী স্বাদের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অর্থোডক্স চা ব্যাপক জনপ্রিয়। প্রচলিত ব্ল্যাক টি থেকে অর্থোডক্স টি সম্পূর্ণ আলাদা। বিশেষ এ চা পানের সময় আলাদা স্বাদ ও গন্ধ অনুভব করা যায়। মন সতেজ করা এ চা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে বিশেষ উপকারী। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে দুই হাজার কেজি বিশ্বমানের বিটি-২ ক্লোন অর্থোডক্স চা নিচ্ছে লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ।’
দেশে বেশি করে অর্থডক্স চা উৎপাদনের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট সার্কেলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে আমাদের দেশের ভালো মানের অর্থোডক্স চায়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিদেশে যদি চা রপ্তানি করতে হয় তবে আমাদের দেশে ব্যাপক পরিমাণে অর্থোডক্স চা উৎপাদন করতে হবে।’