মহিষা দই
আমানত উল্যাহ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩১ পিএম
কাঁচা দুধের তৈরি মহিষের টক দই। প্রবা ফটো
কাঁচা দুধের তৈরি মহিষের টক দই। লক্ষ্মীপুরে সামাজিক অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় খাবার তালিকায় এর অবস্থান শীর্ষে থাকলেও বর্তমানে কমছে সরবরাহ। জেলার বাইরেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুনাম রয়েছে সুস্বাদু এই দইয়ের। পুরো জেলার দইয়ের বড় অংশ উৎপাদন হয় উপকূলীয় জনপদ রামগতি-কমলনগরে। কিন্তু মহিষের বাথান কমে যাওয়া ও চরাঞ্চলে মানুষের বসবাস বৃদ্ধিসহ বাণিজ্যিক ছোঁয়া না থাকায় দইয়ের উৎপাদন কমছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
রামগতি বাজারের দই বিক্রেতা নুরুজ্জামান প্রায় ৩২ বছর এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানে দই বাধ্যতামূলক। খাবারের শেষ মুহূর্তে ওয়ানটাইম কাপে ২৫০ গ্রাম দই থাকবে। অনেকেই পাতিল হিসেবেও আমাদেরকে অর্ডার করেন। এসব অনুষ্ঠানে গরুর দই অর্ডার খুব কম পাওয়া যায়। দুধের দামের সঙ্গে দইয়ের দাম কম-বেশি হয়।
চাকরিজীবী ইয়াকুব আলী ও ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সুযোগ পেলেই তারা মহিষের দই খাওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ছুটে যান। শুধু নিজেরাই নন, বাড়ির জন্যও দই সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তারা।
দুধ বিক্রেতা মনির মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহিষের দুধের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। কিন্তু আগের তুলনায় এখন মহিষের সংখ্যা অনেক কম। মহিষ পালনে মানুষ এখন কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। যত বেশি মহিষ পালন হবে, দুধও তত বেশি উৎপাদিত হবে।
বাথানের মালিক রামগতি উপজেলার শাখাওয়াত মিয়া জানান, চরাঞ্চলে মানুষের বসবাস বেড়েছে। এ ছাড়া চাষাবাদও বেড়েছে। এতে মহিষের চারণভূমি কমেছে। এ জন্য অনেকেই মহিষ পালন ছেড়ে দিচ্ছেন।
কয়েকজন দই বিক্রেতার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানায়, দিনে প্রায় ৫-৬ টনের মতো দই বিক্রি হয়। ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে দিনে কমপক্ষে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার দই বিক্রি করে থাকেন দোকানিরা। এতে বছরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার দই বিক্রি হয় এই দুই উপজেলাতেই। আগে এর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ ছিল।
জানা যায়, জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণের মেঘনানদীর দ্বীপ চরগুলোতে মহিষের বাথান (চারণভূমি) থেকে এ দুধ আসে। বিশেষ করে রামগতি উপজেলা বয়ারচর, চর গজারিয়া, চরআবদুল্লাহ ও কমলনগর উপজেলার চর শামছুদ্দিনসহ বিভিন্ন চর এলাকার বাথান থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়।
দই তৈরির বিষয়ে বাথান মালিকরা জানান, চর থেকে দুধ আনার পর কাঁচা দুধ সরাসরি ১ থেকে ২ কেজি ধারণকৃত এক ধরনের পাত্রে ঢালা হয়। পাত্রগুলোকে টালি বলা হয়। টালিতে কাঁচা দুধ রাখার ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর দুধ জমে দধি হয়। প্রতি লিটার দুধে ৯৫০ গ্রাম দধি হয়। এ দধি ফ্রিজিং ছাড়া এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। দধি বসানোর টালিগুলো পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুর থেকে আনা হয়। বর্তমানে সাইজ ভেদে প্রতিটি টালির দাম ১৬ থেকে ২০ টাকা।
রামগতি ও কমলনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার চরাঞ্চলেই মহিষের উৎপাদন বেশি। রামগতি-কমলনগরের মেঘনা নদীর কয়েকটি দ্বীপে মূল ভূখণ্ডে প্রায় ১২ হাজার মহিষ পালন করা হলেও বর্তমানে চাষাবাদ অনেকটা কমে গেছে। রামগতি উপজেলার কয়েকটি চরে সাড়ে ৬ হাজার ও কমলনগরে ৫ হাজারের মতো মহিষ পালন করা হয়।
কমলনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, আগের তুলনায় এ উপজেলায় মহিষের চাষ অনেকটা কমে গেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে পারলে মহিষ চাষে বিপ্লব ঘটত।
রামগতি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মহিষ পালনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। এ অঞ্চলটি গরু ও মহিষ পালনের উপযুক্ত স্থান। এখানে বিশাল বিশাল চর রয়েছে। গরু ও মহিষ চাষিদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা সব সময় থাকবে।