× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মধ্যবর্তী সময়ের সরিষায় দ্বিগুণ লাভ, বাড়ছে চাষ

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:২৩ পিএম

আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩২ পিএম

সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। প্রবা ফটো

সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। প্রবা ফটো

রংপুরে এক বছর দ্বিগুণেরও বেশি জমিতে বেড়েছে সরিষার আবাদ। উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা আবাদে উৎপাদন বেশি হওয়ায় লাভের আশা করছেন কৃষকরা। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি, অধিক লাভ, স্বল্প উৎপাদন খরচ, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, সরিষার বহুমুখী ব্যবহারের কারণে দিন দিন সরিষা আবাদে ঝোঁক বেড়েছে কৃষকের। এ বছর ৩০০ কোটি টাকার সরিষা উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের। 

রংপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক রনজিত রায় নিচু জমির জন্য বছরে দুটি ফসল আমন ও বোরো আবাদ করতেন। এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি ৫০ শতক জমিতে দুই ফসলের মধ্যবর্তী সময়ে বারী সরিষা-১৪ আবাদ করেছেন। সঠিক সময় সার, সেচ দেওয়ায় হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে সরিষার গাছগুলো। ক্ষেতের সব গাছ সরিষায় পরিপূর্ণ। বড় বড় দানাওয়ালা সরিষার গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ঘরে সরিষা তুলবেন কৃষক রনজিত রায়। 

তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় আমন ও বোরো ধান আবাদ হয়। এ বছর কৃষি বিভাগের স্যারেরা আমাকে উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা আবাদের পরামর্শ দিলেন। আমি সরিষা আবাদ করলাম। এতে সার, সেচ, কীটনাশকসহ অন্যান্য খরচ কম, শ্রমিক খরচ নেই বললেই চলে। বোরো আবাদের আগেই এ ফসল ঘরে তোলা যায়। তাই দুই ধানের মাঝে আমি একটি সরিষা পেয়ে লাভবান হচ্ছি। বাজারে সরিষার দামও ভালো। ক্ষেত থেকেই সরিষা নিয়ে যেতে ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ শুরু করেছে। 

মিঠাপুকুর উপজেলার তাহিয়ারপুর এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আগোত তো খালি আমন আর বোরো লাগাইছিনু। এ্যালা সরিষা আবাদ করতোছি। ফলন ভালো, খরচের থ্যাকি ৫-৬ গুণ লাভ হয়। সরিষার গোড়া আর পাতা পড়ি ভূইয়োত (জমিতে) সার হইতোছে। সরিষার ত্যাল ভ্যাঙ্গি খাইতোছি, খৈল গরু আর মাছ খায়। মানে সরিষার কোনো জিনিষ ফেলানী নাই। এলাকার সউগ মানুষ গত বছর থ্যাকি সরিষা আবাদ করে। 

একই এলাকার কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, মুই গত বছর দেড় একর জমিত সরিষা আবাদ করি ১৭ থ্যাকি ১৮ মণ সরিষা পাইছি। এইবারও ওমনটা হইবে। সরিষাত তেমন রোগবালাই নাই। জমিত পানি আর সার দেওয়া ছাড়া তেমন যত্ন করা নাগে না। এই আবাদ খুবই সহজ, খরচা কম। এমনিতে বাজারে ত্যালের যে দাম, সরিষার ত্যাল খাইলে শরীরও ভালো থাকে, টাকাও বাঁচি যায় নাকি স্যারেরা কইচে। 

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আমন ও বোরোর মাঝামাঝি সময় পড়ে থাকা জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা আবাদ বাড়ছে। উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদের পর বাজারে বিক্রি করে কৃষকের লাভ হচ্ছে ৫ থেকে ৬ গুণ। সেই অর্থ দিয়ে সেচনির্ভর বোরো আবাদের খরচ মেটাচ্ছেন তারা। সরিষা আবাদে ফসলের নিবিড়তা বাড়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়ছে। সরিষার পাতা-কাণ্ড জমিতে পচে তৈরি হচ্ছে জৈবসার। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সরিষার খৈল গরু ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সেই সঙ্গে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে সরিষার কাণ্ড। সরিষার আবাদে যেন সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য। 

গত বছর রংপুর জেলায় ১১ হাজার ৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। এ বছর ২৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ২১২ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হবে ১ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন। এতে করে জেলায় ৯ লাখ ১১ হাজার ৯৯৩ মণ সরিষা আবাদ হবে। গত বছর ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণে সরিষা বিক্রি হয়েছে। তাই এ বছর কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার সরিষা উৎপাদন হবে আশা কৃষি বিভাগের। 

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, স্বল্প জীবনকালীন ও ফলন ভালো হয় এমন জাত বারী সরিষা-১৪, বারী সরিষা-১৫, বিনা সরিষা-৯ জাতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা সরিষা আবাদের পর সেই জমিতে সঠিক সময়ে বোরো ধান আবাদ করতে পারছেন। এ ছাড়া সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে প্রতি বছর কৃষি বিভাগ প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এ বছরও দেওয়া হয়েছে। বীজের সরবরাহ বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। তাই কৃষকরা সঠিক সময়ে গুণগত মানসম্মত বীজ পেয়ে অধিক সরিষা উৎপাদন করতে পারছে। এতে করে ভোজ্য তেলের আমদানি কমায়, প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা