সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:২৬ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৭ পিএম
ইপিক গ্রুপের বার্ষিক বনভোজনের খাবার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি কয়েকশ শ্রমিক। প্রবা ফটো
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা ইপিক গ্রুপের বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে দুই শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের স্বজনরা অসুস্থ হয়েছে। অনেকে আদমজীর আলিফ জেনারেল হাসপাতাল, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতাল, সদর জেনারেল হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থদের মধ্যে ৫০ জনের বেশি শিশু রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে আক্রান্তরা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদমজী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মসিউদ্দিন মেজবাহ।
তিনি জানান, ইপিক গার্মেন্টসের বার্ষিক অনুষ্ঠান ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। সেখানে দুপুরের খাবারের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। সন্ধ্যার পরে শ্রমিকেরা অসুস্থ হতে থাকে। পরে তাদের কয়েকজনকে বেপজা হসপিটালে পাঠানো হয়। বাকিদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ফ্যাক্টরির ভেতরে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন হয়। দুপুরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার সময় কারখানাটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে খাবার দেওয়া হয়। খাবার খেয়ে বিকালে অনেকে অসুস্থ হয়ে বমি, পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়। পরে দ্রুতই তাদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট ইপিক-৪ প্রতিষ্ঠানের অপারেটর ঝুমা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে দুপুরে আমাদের খাবার দেওয়া হয়। বাসায় এনে ওই খাবার খাওয়ার কিছু সময় পর আমার শিশুছেলে বমি করতে থাকে। কয়েকবার করার পর ছেলে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। শত শত শ্রমিক অসুস্থ হয়েছে এই খাবার খেয়ে।’
খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়া কামাল নামের এক কোয়ালিটি অফিসার জানান, খাবার খাওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পরই স্টেজের সামনে তিনবার বমি করেন তিনি। তারপর তার সহকর্মীরা তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্থানীয় আলিফ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফুড পয়জনিং থেকে সমস্যাটা হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাদের এখানে শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৮০ জনের মতো ভর্তি রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ৫৫ জন ও নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ৫৯ জন অসুস্থ শ্রমিককে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। ৩০০ শয্যা থেকে পাঁচজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিক গার্মেন্টসের জিএম (মহাব্যবস্থাপক) মিজানুর রহমান জানান, শ্রমিকদের বিনোদন দিতে ১৫ বছর ধরে বার্ষিক ইপিক উৎসব পালন করা হয়। শ্রমিকেরা সপরিবারে উৎসব উপভোগ করে। শ্রমিকদের জন্য ভালো খাবার, কনসার্ট, খেলাসহ বিভিন্ন ইভেন্টে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তাদের বার্ষিক কাজের মূল্যায়নস্বরূপ অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হয়। গতকাল সকাল থেকেই শ্রমিকরা উৎসবে মেতে ছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই বিকাল ৫টা পর্যন্ত কনসার্ট উপভোগ করে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় শ্রমিকরা খুব নাচানাচি, হইহুল্লোড় করে আনন্দ করেছিল। তখন ওইখানেই বেশ কয়েকজন বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা থেকে একে একে আরও বেশ কিছু শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের আলিফ হাসপাতাল ও জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কেউই স্থায়ীভাবে ভর্তি ছিল না। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে আবার ফিরে এসেছে।’
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। খাবার খেয়ে ওই গার্মেন্টসের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’