সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৫৫ এএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:১১ পিএম
পিঠার স্টলে ভিড় করেন দর্শনার্থীদের ভিড়। বুধবার সকালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে। প্রবা ফটো
নগরায়ণের প্রভাবে পিঠাপুলি যেন বিলুপ্তির পথে হাঁটছে। হারিয়ে যাওয়া পিঠা নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় কলেজের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ আ ন ম মুশতাকুর রহমান।
পিঠা উৎসবে চত্বরজুড়ে ২২টি স্টলে সাজানো ছিল নানা স্বাদের পিঠা। কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর এসব স্টলে ভাজা কুলি, পঞ্চবাহার, গোলাপ পিঠা, সেমাই পিঠা, কস্তুরি পিঠা, রঙবাহার, লিচু ও গোলাপ, জামদানি পিঠা, কুটুম পিঠা, মিষ্টি বড়া, আন্দুসা, দর্শন, ভাজা নকশি, মিষ্টি পুলি, ভেজানো নকশি, কুসুম, বিবিখানা, লবঙ্গ লতিকা, সোহাগী বড়া, রসের নকশি বিলাস, সুন্দরী কমলা, নকশি দোপাটি, শাহি ভাপা পিঠা, দুধ চিতই, ঝাল পুলি, গরুর মাংসের সমুচা, মুরগির মাংসের সমুচা, ছানার পুলি, পাটিসাপটা, নারিকেলের তিল পুলি, ক্ষীরে ভরা পাটিসাপটা, সুজির পোয়া পিঠা, নারিকেলের নাড়ু, নকশি পিঠা, কলা পিঠাসহ প্রায় ২০০ রকমের সুস্বাদু পিঠা সবার নজর কাড়ে। শীতের পিঠার মোহময় গন্ধে মাতোয়ারা ছিল পুরো কৃষ্ণচূড়া চত্বর।
কলেজের বিএনসিসির ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল তিসা বলেন, ‘উৎসবে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বাহারি রকমের পিঠা রয়েছে। আমাদের তৈরি শতাধিক পিঠা নিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে।’ উৎসবে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থী তাইফা বলেন, ‘পিঠা উৎসবে গ্রামীণ ঐতিহ্যটাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অনেক ভালো লাগছে।’
আরেক শিক্ষার্থী ইভা আক্তার বলেন, ‘এত রকমের পিঠা সব আমরা নিজ হাতেই বানিয়েছি। অবশ্য বাড়িতে মাসহ অন্যদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। অনেক পিঠার নাম জানতাম না। এ আয়োজনের মাধ্যমে পিঠা বানানো শিখলাম, পাশাপাশি নামও জানলাম। দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
পিঠা উৎসবে এসে খুশি দর্শনার্থীরাও। রাকিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শহরের যান্ত্রিকতা ও ব্যস্ততার কারণে পিঠা তৈরির সময় হয়ে ওঠে না। ফলে এসব পিঠা ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে। কিন্তু এই উৎসবে নানাবাড়ি, দাদাবাড়ির সেই গ্রামের পিঠা খাওয়ার আমেজ অনুভব করছি। খুব সুন্দর আয়োজন। প্রতি বছর এমন আয়োজন করা প্রয়োজন।’
কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘কলেজের শিক্ষক পরিষদ প্রতিবছরই পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। মূলত বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এ আয়োজন। এর মাধ্যমে অনেকেই ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে।’
অধ্যক্ষ আ ন ম মুস্তাকুর রহমান বলেন, ‘এবার নিয়ে তৃতীয়বার পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। অভিভাবকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা পিঠা বানিয়েছে। এবার তারা নতুন ও ভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করেছে। মূলত শিক্ষার্থীদের গ্রামীণ ঐতিহ্য বিভিন্ন পিঠার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ আয়োজন। উৎসবটি সবাই দারুণভাবে উপভোগ করেছে।’