সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৯ এএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৯ পিএম
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে তাহিরপুর-নতুন বাজার সড়কের এক জায়গা থেকে মাটি তুলে অন্য জায়গায় ফেলা হচ্ছে। প্রবা ফটো
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়ক। রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের দায়িত্বও তাদের। সম্প্রতি সড়কটি হাওররক্ষা বাঁধের আওতায় এনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর-নতুন বাজার সড়কের ইসলামপুর গ্রামে এ কাজ চলছে। কাজে অনিয়মেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচা এ সড়কের ইসলামপুর ও খলিশাজুরীর গ্রামের সামনে ছোট দুটি ভাঙা রয়েছে। প্রতিবছর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই দুটি জায়গায় সামান্য মাটি ফেলা হয়। তবে এ বছর এই দুই জায়গাসহ গোলকপুর থেকে খলিশাজুরী পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক বাঁধ হিসেবে নির্মাণে পাউবো পিআইসি গঠন করেছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামকে। যেখানে কয়েক হাজার টাকা খরচ করলেই সড়কটি সংস্কার বা বাঁধ নির্মাণ হয়ে যেত, সেখানে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ এনে লুটপাট করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
অবশ্য স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা সরেজমিনেও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে ইসলামপুর গ্রামের সামনে দেখা যায়, খননযন্ত্রের (ভেকু মেশিন) সাহায্যে সড়কের ওপরের মাটি সরিয়ে আবার সেখানেই রাখা হচ্ছে। পরে মেশিন দিয়ে চাপা দেওয়া হচ্ছে। যাতে দেখে মনে হয় সড়কের ওপরে নতুন মাটি ফেলে কাজ করা হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে নতুন বাজার হয়ে ট্যাকেরঘাট এলাকায় যাতায়াত করে স্থানীয়রা। ওপরের আস্তরণ তুলে এভাবে কাজ করায় ভোগান্তিতে পড়েছে তারা।
খলিশাজুরী গ্রামের বাসিন্দা আহাদ নুর বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এটি সড়ক, ফসলরক্ষা বাঁধ নয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ‘প্রতিবছর এই সড়কের যেখানে ভাঙন ধরে, সেখানে মাটি দেওয়া হয়। এ কাজে কয়েক হাজার টাকা খরচ করলেই হতো। এ বছর পুরো রাস্তার ওপর থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে আস্তরণ তুলে আবার সেখানেই রাখা হচ্ছে। এতে সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে। সরকারি টাকা নয়ছয় করার জন্যই এমন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’
পুরোনো সড়কের ওপর নতুন করে কত ফুট মাটি পড়বে বা কতটুকু প্রশস্ত হবে– জানতে চাইলে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী (এসও) মনির হোসেন তা জানাতে পারেননি। তিনি অফিসে গিয়ে জানাবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান। পরে তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি।
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছরই অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নিয়ে অনেক প্রতিবাদ হয়েছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে, অপ্রয়োজনীয় বাঁধ ঠিকই বানাচ্ছে। তাহিরপুরে এ রকম কয়েকটি বাঁধ হচ্ছে এবার। ফসল রক্ষার জন্য এই বাঁধগুলো হচ্ছে, তা বলা যায় না, বরং পাউবো তাদের আয়ের আধার হিসেবে করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’
উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘সড়কটি আমাদের হলেও কাঁচা হওয়ায় উঁচু করার কাজ করছে পাউবো। আমরা যখন পাকা করব, তখন যদি উঁচু মনে হয়, তাহলে নিচু করেই কাজ করব।’
জানতে চাইলে পাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘এবার বাঁধের সংখ্যা কমেছে। গেল বছর বাঁধ ছিল ১ হাজার ৬৪টি। এবার ৭৩৫টি নির্মাণ করা হচ্ছে। তবুও বিভিন্ন জায়গা থেকে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ পাচ্ছি। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখতে জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’