তাড়াশে তিন খুন
সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৪ পিএম
তাড়াশে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় রাজীব কুমার ভৌমিক নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রবা ফটো
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় রাজীব কুমার ভৌমিক নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উল্লাপাড়ার তেলিয়াপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার কর হয়। গ্রেপ্তার রাজীব কুমার ভৌমিক হত্যার শিকার বিকাশ সরকারের আপন ভাগনে। ‘পাওনা’ টাকার চাপ দেওয়ায় মামা বিকাশ চন্দ্র সরকার, মামী স্বর্ণা রানী সরকার ও মামাতো বোন তুষি সরকারকে গলা কেটে হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের
কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) আরিফুর রহমান মন্ডল। তিনি বলেন, ‘টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে মামা-ভাগনের
মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। দ্বন্দ্বের জেরে রাজীব এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। প্রথমে রাজীব
হাঁসুয়া দিয়ে মামাতো বোন, পরে মামি ও সবশেষে মামাকে কুপিয়ে হত্যা করেন।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিকাশ সরকারের স্ত্রীর বড় ভাই সুকোমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে
হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলায় রাতেই রাজীবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাকে আদালতে
পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, নিহত বিকাশ সরকার কৃষি কাজের পাশাপাশি ব্যবসা করতেন। রাজীবের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। ব্যবসার পুঁজি হিসেবে তিনি রাজীবকে ২০ লাখ টাকা দেন। বিভিন্ন সময়ে তাকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন রাজীব। কিন্তু চলতি বছর বিকাশ রাজীবের কাছে আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা সাত-আট দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার জন্য ২২ জানুয়ারি তাকে চাপ দেন। টাকার জন্য রাজীবের মাকে (বিকাশের বোন) মোবাইলে গালমন্দও করেন। রাজীব টাকা জোগাড়ে করতে ব্যর্থ হয়। কষ্ট পেয়ে মামা ও তার পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭
জানুয়ারি বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে বিকাশকে ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে বাসায় যাওয়ার
কথা বলেন রাজীব। এ সময় বিকাশ সরকার ব্যক্তিগত কাজে বাসার বাইরে কাটাগাড়ি বাজার
এলাকায় ছিলেন। তিনি রাজীবকে টাকা নিয়ে বাসায় আসতে বলেন এবং ফিরে না আসা পর্যন্ত
স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে গল্পগুজব করতে বলেন।
রাজীব বাসায় যাওয়ার পর মামি স্বর্ণা রানী সরকারের কাছে কফি
খেতে চান। মামি বাসার নিচে দোকানে কফি কিনতে গেলে রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে
মামাতো বোন পারমিতার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এর মধ্যে মামি কফি নিয়ে ফিরলে
তাকেও একইভাবে মাথায় আঘাত করেন। পরে হাঁসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
কিছুক্ষণ পর মামা বাসায় ঢুকলে তাকেও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে গলা কেটে তার মৃত্যু
নিশ্চিত করেন। পরে মরদেহ তিনটি কক্ষে রেখে তালা দিয়ে রাজীব উল্লাপাড়ার তেলিয়াপাড়ায়
নিজের বাড়ি চলে যান। পথে লোহার রডটি একটি পুকুরে ফেলে দেন। আর রক্তমাখা হাঁসুয়াটি
নিজের বাড়িতে রেখে দেন।
ঘটনার দুইদিন পরে গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলা সদরের বারোয়ারি বটতলা মহল্লার তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলার বিকাশের ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে তিনজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।