× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শাপলা বেচে সংসার চলে আবদুর রহমানের

মেরিনা লাভলী, রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৪৭ পিএম

আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২২ ১৫:১২ পিএম

শাপলা ফুলের ডালি নিয়ে বসে আছেন আবদুর রহমান। ছবি : প্রবা

শাপলা ফুলের ডালি নিয়ে বসে আছেন আবদুর রহমান। ছবি : প্রবা

আবদুর রহমানের বয়স এখন ৬০ বছর। পরিবারে আছেন স্ত্রী ও সন্তানরা। পেশায় কৃষিশ্রমিক হলেও বছরের অনেকটা সময় থাকে না কোনো কাজ। জীবিকার তাগিদে তাকে ভাবতে হয়েছে বিকল্প আয়ের উৎস। এই বয়সে এসে ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন বিলে ফোটা ফুল কুড়ানোর দায়িত্ব। বিভিন্ন খাল-বিল থেকে শাপলা ফুল কুড়িয়ে বিক্রি করে সেই অর্থে চলে তার সংসার।

প্রতিদিন রংপুর মেডিকেল কলেজের সামনে বসেন আবদুর রহমান। ডালি ভর্তি করে নিয়ে আসেন লাল-সাদা শাপলা ফুল। অপেক্ষায় থাকেন মেডিকেল কলেজ ছুটির। তার থেকে কলেজের অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন শাপলা ফুল কেনেন। সাধারণ মানুষও কিনে প্রিয়জনদের শাপলা ফুল উপহার দেন। কেউ রান্নার জন্য কেউবা পূজা-অর্চনায় শাপলা ফুল কিনে নিয়ে যান। সারা দিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার ফুল বিক্রি করেন। তাই দিয়ে চলে আবদুর রহমানের সংসার।

আবদুর রহমান বলেন, রংপুর নগরীর বাহাদুর সিং মাস্টার এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার দুই ছেলে থাকলেও তাদের আলাদা সংসার। তাই স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে প্রতিদিন কাজের সন্ধানে নামতে হয় তাকে। কৃষিশ্রমিক হওয়ায় সারা বছর কাজ থাকে না। বিশেষ করে হেমন্তে কাজ না থাকায় অনেক সময় না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে আবদুর রহমান ও তার স্ত্রীকে।

২০১৪ সালের দিকে এক সকালে বুড়িরহাটের পাশে চেংমারীর বিলে অগণিত শাপলা ফুল দেখতে পান আবদুর রহমান। তখনই মাথায় আসে শাপলা ফুল বিক্রির। ভোরে বিলের পানিতে নেমে শাপলা ফুল তুলে হাটবাজার, স্কুল-মাদরাসার সামনে কিংবা জনসমাগম ঘটে এমন জায়গায় ফেরি করে ফুল বিক্রি শুরু করেন। তখন ফুল বিক্রিতে যা রোজগার হতো তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলত তার। শুরুতে একটি ফুলের আঁটি ১০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে একটি ফুলই ১০ টাকায় বিক্রি করছেন।

আবদুর রহমান বুড়িরহাটসহ আশপাশের বিল, পাশের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন চরের বিল থেকে শাপলা ফুল সংগ্রহ করেন। বর্ষাকাল থেকে হেমন্তের শেষ দিক পর্যন্ত খাল-বিল থেকে শাপলা ফুল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ আঁটি ফুল তুলতে পারেন তিনি। এরপর সেগুলো এনে রংপুর মেডিকেল কলেজ, সিটি বাজার, টাউন হলসহ বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করেন। তার শাপলা ফুল কেনার প্রধান ক্রেতা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আবদুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ্যালা শহরোত ম্যালা মানুষ হইছে। এইজন্যে গ্রামের খাল-বিল সউগ ভরাট করি বিল্ডিং করতোছে, স্কুল বানাইতোছে। আগে শহরোত ৩০-৫০টা খাল-বিল ছিল। এ্যালা ২-৩টা বিলে শাপলা ফোটে। তা-ও ম্যালা কম শাপলা থাকে। মোর দুই ছাওয়া মাইনষের দোকানোত কাম করে, হামার খোরাকি দিবার পারে না। সেইজন্তে এই বয়সোতও কাম কইরব্যার নাগে। মোর পাত রোগ হইচে। পাও ফুলি যায়, টাকার জন্তে ডাক্তার দেখাবার পাও না। সেই জন্তে এ্যালা বেশি দাঁড়ায়া থাকবার পাও না। কার্তিক মাসোত কোনটে ধানের কাম নাই। সেইজন্তে উপায় না দেখি বৃষ্টির দিন থ্যাকি শীতের আগ পর্যন্ত বিল থ্যাকি শাপলা তুলি বিক্রি করি সংসার চালাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম বাড়তেছে, তাতে টিকাই মুশকিল হয়্যা গেইছে। মুই অভাবী মানুষ। মোর ভিতি কাউন্সিলরও দেখে না, কোনো হেলেপও করে না। গ্রামের ম্যালা মাইনষে টিসিবির কার্ড পাইছে। মোক একটা কার্ডও দিল না। সরকার যদি তোমার এই ন্যাকা দেখি মোর ভিতি একনা তাকায়, তাইলে মোর ম্যালা উপকার হইবে। একন্যা বড় করি ছাপায় দেন বাহে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা