প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৫ এএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৮ এএম
গাইবান্ধা আবদুল হামিদ স্টেডিয়ামের বড় অংশ দখল করে বসানো হয়েছে বাণিজ্য মেলার স্টল। সোমবার তোলা। প্রবা ফটো
মেলার নামে এ বছরও সারা দেশে খেলার মাঠ দখলের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মেলার মৌসুম হিসেবে পরিচিত শীতকালে এ তৎপরতা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আবার কোথাও অবৈধভাবেই চলে এসব আয়োজন। এতে বাদ যায় না স্কুল মাঠ থেকে শুরু করে জেলা স্টেডিয়ামও। মাসব্যাপী এসব মেলায় মাঠ ক্ষতবিক্ষত করে বানানো হয় ইট-সিমেন্টের স্থাপনা। ফলে মেলা শেষেও অনুপযোগী হয়ে থাকে অনেক মাঠ। এ নিয়ে খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাণিজ্য মেলা নামে গাইবান্ধায় শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম দখল করে বসানো হয় একাধিক স্টল। মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজনের খবরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় শহরজুড়ে। বিতর্কের মুখে স্টেডিয়ামে মেলা না করার ঘোষণা দিলেও গতকাল পর্যন্ত সরানো হয়নি কোনো স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। টিনের প্রাচীর দিয়ে মাঠের বড় একাটি অংশ দখল করা হয়েছে।
গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাকসুদার রহমান শাহান জানান, ‘চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে স্টেডিয়ামে কোনো মেলা হচ্ছে না। এটি কারা করছে আমাদের জানা নেই। তবে স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে মেলা হবে।’
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘প্রথমে শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়ামে বাণিজ্য মেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন যেহেতু শীতের সময় খেলাধুলার প্রোগ্রাম বেশি তাই মেলা স্থানান্তর করে শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ মাঠে নেওয়া হয়েছে। স্টেডিয়াম মাঠে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল দু-এক দিনের মধ্যে তা সরানো হবে।’
একইভাবে শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়াম মণিপুরি তাঁতশিল্প জামদানি ও বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মেলার জন্য ভাড়া দেয় জেলা প্রশাসন। এতে বন্ধ হয়ে যায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে সিদ্ধান্ত বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। সরানো হয় মেলার সামগ্রীও। তবে ক্ষতবিক্ষত থেকে বাঁচানো যায়নি মাঠকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার আয়োজন করতে মাঠের বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে বাঁশ-খুঁটি বসিয়ে দোকান নির্মাণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন স্থাপনার কারণে নষ্ট হয়ে পড়ে ক্রিকেট খেলার দুটি পিচ।
স্থাপনার কারণে পুরো মাঠই খোঁড়াখুঁড়ি করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়।
এদিকে মেলার আয়োজন বাতিল হলেও মাঠ সংস্কারের দাবি জানায় একাধিক সংগঠন। এরই মাঝে সংস্কারের দাবিতে প্রাণের শরীয়তপুরের নামে এক সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। শরীয়তপুর-মাদারীপুর সড়কে জেলা স্টেডিয়ামের সামনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও ফেস্টুন নিয়ে খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় বক্তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠ সংস্কার করা না হলে পুনরায় কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, মেলার আয়োজকরা মাঠটি সংস্কার করে দিবে। গত বছর মাদারীপুরে এ ধরনের মেলা হয়েছে। এ বছরও এরই প্রেক্ষিতে মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন নানা মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের আনোয়ারার সিইউএফএল-সংলগ্ন খেলার মাঠেও চলছে মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মেলা। ১৫ জানুয়ারি থেকে মাঠে মাসব্যাপী ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প মেলা শুরু হয়। তবে অনুমতির ব্যাপারে নিশ্চিত করতে পারেনি কেউই।
মাসব্যাপী এ মেলায় ১০০টি স্টলে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে বসেছেন। মাঠের অর্ধেকের বেশি দখল করে চলছে এই মেলা। এজন্য মাঠে অস্থায়ী মঞ্চ এবং টিন দিয়ে বিভিন্ন দোকান তৈরি করা হয়। মেলা উপলক্ষে সরঞ্জাম নিয়ে প্রতিদিন মাঠে ঢুকছে ট্রাক ও পিকআপভ্যান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠ।
চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের না জানিয়ে মেলার আয়োজন করার বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এদিকে অনুমতি ছাড়াই ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন ‘ওয়াপদা মাঠে’ চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার জোর প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে মেলার ৫০/৬০ শতাংশ কাজ। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি মেলা উদ্বোধনের কথাও রয়েছে।
হবিগঞ্জ ‘নিউফিল্ড’ খ্যাত ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ বন্ধ করেও চলছে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি। শহরের অন্যতম খেলার স্থান হিসেবে পরিচিত এই মাঠটিও দখল করে বসানো হয়েছে একাধিক স্টল।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিবেদকরা)