বান্দরবান প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৯ পিএম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৪৯ পিএম
ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রবা ফটো
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে বন্ধ থাকা সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। রাতে আর কোনো গোলাগুলি না ঘটায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ও বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হবে বলেও জানান তারা।
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘মধ্যরাতের পর আর কোনো গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে- তাই গতকাল বন্ধ হওয়া ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাইশপারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘রাতে তো আর শিক্ষপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে না। তারপরও পরিস্থিতি খারাপ হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার যেকোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন বলে জানিয়ে রাখা হয়েছে।’
এদিকে সীমান্তের উত্তেজনা কিছুটা কমার কারণে সাময়িক বন্ধ হওয়া ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় এবং সীমান্তের ১০০ গজ দূরত্বে থাকা মিশকাতুন নবী দাখিল মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার কথা জানান বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী। তিনি বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি আজকে স্বাভাবিক হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম চলছে তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
রাতে গোলাগুলির আওয়াজ এলেও মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে স্কুল কেন খোলা রাখা হলো- এমন প্রশ্নে বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘রাতে তো আর বিদ্যালয়ের ক্লাস চালু রাখা হয় না। সকালে পরিস্থিতি শান্ত ছিল, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন বলে জানিয়ে রাখা আছে।’
সীমান্তবর্তী এলাকার ভাজবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক
নুরুল আবছার বলেন, 'সীমান্তের পরিস্থিতি এই ভালো আবার এই
খারাপ। এখন অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে কিন্ত গতরাতেও সীমান্তের ওপারে গোলার
আওয়াজ শোনা গেছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা
আতঙ্কের মধ্যে বিদ্যালয়ে গেছে। শিক্ষক বলেছেন ৭০ শতাংশ
শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে তাই দুয়েক
দিনের জন্য স্কুল বন্ধ রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল।'
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ঘুমধুম সীমান্তে কোনো ধরনের গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন ‘সকাল থেকে এখানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ শুরু হয় দেড় বছর আগে। ২০২২ সালে জুলাই থেকে শুরু হয়ে টানা ছয় মাস যুদ্ধ চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে। এর পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও সম্প্রতি আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।