ইসমাঈল হোসেন, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫২ পিএম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৩ পিএম
নিজের খেজুরবাগানে মো. সৈয়দ। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা হালদিছড়া // প্রবা ফটো
কাউকে চোখ বেঁধে সৈয়দের খেজুরবাগানে নিয়ে তা খোলার পর মনে হবে আরব দেশের কোনো একটি খেজুরবাগানে এসেছে। মুহূর্তের জন্য যে কেউ দ্বিধায় পড়ে যায় এই বাগানে এসে। সৈয়দ তার স্বপ্নের খেজুরবাগানকে হুবহু আরব দেশের খেজুরবাগানের মতোই সাজিয়েছেন। সারিবদ্ধভাবে লাগিয়েছেন চার শতাধিক খেজুরগাছ। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশের অপরূপ সৌন্দর্যময় বাগানটি দেখে যে কারও মন জুড়িয়ে যায়। এটি এখন উপজেলার জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হয়ে উঠেছে।
উপজেলার ধামাইরহাট বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত হালদিছড়ার এই বাগান প্রায় সাত একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে। খেজুর ছাড়াও এখানে রয়েছে আম, পেয়ারা, বরই, লিচু, কলা, কমলালেবু ও সবজি। পাশে আছে বিশাল পুকুর, যেখানে হরেকরকমের মাছের সমাহার। তার পাশে খেজুরপাতায় তৈরি হয়েছে সুন্দর ঝুপড়িঘর। সেখানে দুটি চুলা ও পাশে থাকে লাকড়ি। মূলত এখানে যারা শীতকালীন পিকনিক করতে আসে তাদের জন্যই এ ব্যবস্থা। শীতের মৌসুমে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সময় কাটাতে ও শীতকালীন পিকনিক করতে সিরিয়াল দিয়ে আসতে হয় তার এই খেজুরবাগানে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগানটি বেশ পরিপাটি। গাছগুলোর চারপাশে চাষ দিয়ে বালুময় করে রাখা হয়েছে। যেন মনে হয় একটুকরো আরব। সেখানে স্কুল-কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকার বেশ কিছু যুবক এসেছেন। তারা কেউ রান্না করছেন, কেউ ফুটবল খেলছেন, কেউ বাগানটি ঘুরে দেখছেন, কেউ কেউ ছবি তুলছেন, আর কেউ বা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। মূলত আরও কয়েক দিন আগে তারা সৈয়দকে ফোন করে সিরিয়াল নিয়ে এখানে পিকনিক করতে এসেছেন। আরেকটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে সৈয়দের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করার দৃশ্য।
বাগানমালিক মো. সৈয়দ বলেন, শীতের মৌসুমে রসের ব্যাপক চাহিদা। ১০-১৫ দিন আগে সিরিয়াল দিয়েও সব সময় পাওয়া যায় না রস। দেশি জাতের এসব গাছ সৈয়দ ১৩ বছর আগে লাগিয়েছেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে লাগিয়েছেন বিদেশি জাতের আরও ৫০টি খেজুরগাছ। বর্তমানে প্রায় ৩০-৩১টি গাছে রস পাওয়া যাচ্ছে। গাছগুলো সামনের বছর আরও পরিপক্ব হলে প্রতিদিন অন্তত দুই মণ রস পাওয়া যাবে। সৈয়দ তার বাগানটি সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন। মূলত রান্নার সব সুবিধা থাকায় এবং খেজুরবাগান দেখতে এসে এখানে পিকনিক করে লোকজন।
পিকনিকে আসা উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, বাগানটি ফেসবুকে দেখেই ভালো লেগেছে। তাই কলেজের সহপাঠী ও এলাকার কয়েকজন তরুণকে নিয়ে পিকনিকে এসেছি। সৈয়দের বাগান ও তার আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
সৈয়দ বলেন, আমি একসময় মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিলাম। দেশে ফিরে সেখানকার খেজুরবাগানের আদলে এই দেশি খেজুরবাগানটি করার চেষ্টা করেছি। প্রতিদিন আমি ১০-১২ ঘণ্টা বাগানে কাজ করি। দেখাশোনার জন্য আরও কয়েকজন কর্মচারী আছে। অনেকে পিকনিক করতে বা ঘুরতে আসে। তাই বাগানটি সব সময় পরিপাটি রাখার চেষ্টা করি, যাতে সবার ভালো লাগে। এ ছাড়া এখানে যারা পিকনিক করতে আসে তাদের জন্য রান্নাসহ ফলমূল খাওয়ার সুব্যবস্থা রেখেছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাগানটা আমি আরও সুন্দর ও বড় করতে চাই।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস সৈয়দের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। সহায়তার জন্য সৈয়দকে লালানগর ইউনিয়নে দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।