লালমনিরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০৫ পিএম
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৫ পিএম
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত। ছবি : সংগৃহীত
সীমান্তে ফের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক প্রাণ হারালেন। লালমনিরহাটের দহগ্রাম সীমান্তে রবিবার (২৮ জানুয়ারি) ভোরে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন রফিউল ইসলাম টুকলু নামে ওই বাংলাদেশি। সপ্তাহখানেক আগে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছিলেন বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন। দুদিন পর তার মরদেহ ফেরত দিয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
সীমান্তে আজ নিহত রফিউল ইসলাম টুকলু পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে।
রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পানবাড়ী কোম্পানি কমান্ডার আমানুজ্জামান আমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে রফিউলের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দহগ্রামের আঙ্গরপোতা সীমান্তের ১ নম্বর মেইন পিলারের ১ নম্বর সাব পিলারের নিকট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের ১০/১২ জনের একদল চোরাকারবারি ভারতীয় প্রসাধনী পণ্য চালান করছিলেন। এ সময় ভারতের কোচবিহার-৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অজুন কোম্পানি সদরের উমর বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দল চোরাকারবারিদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে বাংলাদেশি যুবক রফিউল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে ভারতীয় কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ, বিএসএফ স্থানীয়দের সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আঙ্গরপোতা এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে রফিউল ইসলাম টুকলু নামে এক যুবকসহ কয়েকজন যুবক ভারত সীমান্ত থেকে চিনি ও প্রসাধনীসামগ্রী আনতে যায়। এ সময় ভারতীয় বিএসএফ উভয় দেশের চোরাকারবারিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই টুকলু মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাশ ফেরত আনার জন্য নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিজিবির নিকট আবেদন জানানো হয়েছে। ভারতীয় মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি।’
এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটায়িনের পানবাড়ী কোম্পানি কমান্ডার আমানুজ্জামান আমান বলেন, ‘রবিবার ভোর ৫টার দিকে আঙ্গরপোতা সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ দুপুর ১টার দিকে ভারতীয় কোচবিহার বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অর্জুন কোম্পানি কমান্ডারকে কড়া প্রতিবাদ, নিহত যুবকের লাশ ফেরত ও পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’
এর আগে গত সোমবার ভোরের দিকে বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন। এরপর লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। রইশের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। দুদিন পর তার মরদেহ ফেরত দেয় বিএসএফ।
ঘটনার পর বিজিবির যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়, বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে সোমবার ভোরে চোরাকারবারিরা গরু আনছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ তাদের ধাওয়া করে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে। এ সময় বিজিবি সদস্য সিপাহি রইশুদ্দীন বিএসএফ সদস্যদের দেখে সামনে এগিয়ে যান।
আরও বলা হয়, ঘটনার সময় সিপাহি রইশ জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন। বিএসএফ সদস্যদের কাছে নিজেকে তিনি বিজিবি সদস্য পরিচয় দেন এবং ঘটনার ব্যাপারে জানতে চান। পরিচয় পাওয়ার পরও বিএসএফ সদস্যরা রইশকে গুলি করে।