শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৯ এএম
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৯ পিএম
আমের মুকুল। ছবি : সংগৃহীত
চলছে মাঘ, শীতের ভরা মৌসুম। শীতে কাঁপছে দেশ। হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন অনেকটা বিপর্যস্ত। অথচ এরই মধ্যে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার আম গাছগুলোতে মুকুলের দেখা মিলেছে। এক মুকুল থেকে আরেক মুকুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল। আমের মুকুলের ম ম ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে মৌমাছিরা। তবে স্বস্তির এই সময়ে উল্টো চাষিদের যত দুশ্চিন্তা কুয়াশা নিয়ে। কারণ তীব্র কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এসব মুকুল। এতে কমে যাবে ফলনও।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বারোমাসি ও দেশি জাতের আমগাছে মুকুল দেখা যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবুজ পাতা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে মুকুল।সোনালি মুকুলের পরিমাণ কম হলেও সৌরভ ছড়াচ্ছে বাতাসে। মুকুল আসায় গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাগানের মালিক ও লিজ নেওয়া ব্যবসায়ীরা।
এ অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪০ জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফজলি, গোপালভোগ, মোহনভোগ, ন্যাংড়া, ক্ষীরশাপাতি, হিমসাগর, কৃষাণভোগ, মল্লিকা, লক্ষ্মণা, আম্রপলি, দুধসর, দুধকলম, বিন্দাবনী, আরজান, রানীপছন্দ, মিশ্রীদানা, সিঁন্দুরী, আশ্বিনাসহ নানা ধরনের গুটি আম।
উপজেলার ঝিকরা এলাকার আমচাষি মোস্তাফিজুর জানান, তার আমবাগানের অধিকাংশ গাছেই মুকুল দেখা দিয়েছে। মুকুলের মাথাগুলোকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। তবে কিছুদিন থেকে ঘন কুয়াশার কারণে মুকুল কিছুটা নষ্ট হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মাসের শেষের দিক থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক পর্যন্ত সব গাছে মুকুল দেখা যাবে বলেও জানান তিনি।
চাষি আব্দুল মতিন বলেন, আগাম জাতের ৪টি গাছে মুকুল এসেছে। বাকি ১৮টি গাছে এখনও মুকুল আসেনি। আশা করছি দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই মুকুল চলে আসবে। এখন গাছের গোড়ার যত্ন নিচ্ছি।
আরেক চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কাঁচামিষ্টি ও আগাম জাতের গুটি আমের গাছে মুকুল এসেছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই সব গাছ মুকুলে ছেয়ে যাবে। তবে কুয়াশায় কিছু মুকুল নষ্ট হতে পরে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র জানায়, ডিসেম্বরের শেষদিক থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় অবধি বারোমাসি বা লোকাল জাতের আমগাছে মুকুল আসা শুরু হয়। তবে এবার জানুয়ারির শুরুতেই মুকুল আসা শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসেই মূলত আমগাছে মুকুল আসা শুরু হয়। শীতের তীব্রতা, তাপমাত্রা ও ঘন কুয়াশার কারণে গাছের মুকুল নষ্ট হতে পারে।
এ অবস্থায় আগাম মুকুল বাঁচাতে করণীয় সম্পর্কে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘন কুয়াশা বা শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে আগাম মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মুকুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ছত্রাকনাশক ও ইমিডা ক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। তাহলে এই ক্ষতি কমে যাবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, আগাম কিছু জাতের গাছে মুকুল এসেছে। রাজশাহীতে এবার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। বাকিগুলোতে পর্যায়ক্রমে চলে আসবে।
গেল দুই সপ্তাহ থেকে গাছে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। মূলত আবহাওয়ার কারণে দেশি জাতের (বিশেষ করে আঁটি ও ফজলি আম) গাছে এই আগাম মুকুল এসেছে। ঘন কুয়াশার কবলে না পড়লে, এসব মুকুলে ভালো আম হবে। তবে নিয়ম মেনে মাঘের শেষদিকে যেসব গাছে মুকুল আসে, তাতে আরও বেশি ফলন হয়। এ ব্যাপারে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এবার ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮.৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন আম। গত বছর আম বিক্রি করে এ অঞ্চলের চাষিদের আয় হয়েছিল ১৫২৮ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭০ টাকা।