রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪১ এএম
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪২ এএম
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ তকদীর আলী। তীব্র এই শীতেও গায়ে নেই এক টুকরো গরম কাপড়। ছেঁড়া লুঙ্গি জড়িয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা তার। শনিবার সকালে কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার সওদাগরপাড়ায়। প্রবা ফটো
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ তকদীর আলী। তীব্র এই শীতেও গায়ে নেই এক টুকরো গরম কাপড়। ছেঁড়া লুঙ্গি জড়িয়ে তার অসহায়ত্বের চাহনি জানান দিচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ দারিদ্র্যপীড়িত জেলা কুড়িগ্রামের কথা। তার এই অসহায়ত্বকে ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে তিনি বলে ওঠেন ‘ছবি তুইলা কি করবেন। আমাগো দেহনের কেউ নাই’ এ কথা বলে চলে যায় তকদীর আলী।
শনিবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন দিন তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় কনকনে ঠান্ডায় কষ্টে পড়েছে জেলার ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চার শতাধিক চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তকদীর আলীর মতো আরও অগণিত অসহায় মানুষের বসবাস কুড়িগ্রাম শহরতলির সওদাগরপাড়া গ্রামে। এ গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়ে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিতদের চিত্র। সওদাগরপাড়াটি কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত হলেও অনেকটা বস্তির মতো। শীতে এখানকার মানুষগুলোর সামাজিক অবস্থান ফুটে উঠেছে তকদীর আলীর মাধ্যমে। তকদীর আলী এই গ্রামের বাঁধে বাস করলেও সম্প্রতি পাউবোর বাঁধ সংস্কারের কারণে উচ্ছেদ হয়েছেন তিনি। বর্তমানে বাস করেন চর ভেলাকোপায় অন্যের বসতভিটায়। অতিকষ্টে দিনাতিপাত করায় কিনতে পারেনি গরম কাপড়। তাই ছেঁড়া লুঙ্গি জড়িয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা তার।
তকদীর আলীর পুত্র সাজন মিয়া বলেন, ‘৩-৪ বছর থেকে আমরা কোনো সরকারি সহযোগিতা পাই নাই। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা কম্বল দেওয়ার কথা বলে কিন্তু দেয় না। আসলে আমাদের ভাগ্যে কম্বলই নাই।’
সওদাগরপাড়া গ্রামের ক্যালেন্ডার বিক্রেতা সলিবর রহমান বলেন, ‘এই গ্রামের অসংখ্য মানুষ তকদীর আলীর মতো অসহায়। যাদের গরম কাপড় নেই বললেই চলে। জেলা প্রশাসনের লোকজন কম্বলসহ সব সাহায্য সহযোগিতা চরে দিয়ে আসে। এই গ্রামে কোনোদিন আসে না।’ কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলামকে একাধিক মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৭০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রিকশা চালকদের টুপি সংবলিত জ্যাকেট এবং শিশুদের জন্য শিশু খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। সমন্বিতভাবে প্রকৃত শীতার্তদের মাঝে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত থাকবে।