শরীফ স্বাধীন, মাগুরা
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:১১ এএম
ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় গড়াই নদে বিলীন হয়েছে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গঙ্গারামখালী গ্রামে। প্রবা ফটো
মাগুরার শ্রীপুরে বেড়িবাঁধের কোলঘেঁষে বালু তোলায় নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা। উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের গঙ্গারামখালী গ্রামের মালোপাড়া ও বিশ্বাসপাড়া এলাকায় বাঁধরক্ষার নামে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় দেখা দিয়েছে এই ভূমিধ্স। কয়েক দিনের ব্যবধানে ওই এলাকার ১৫টি পরিবারের বেশ কিছু ঘর-বাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ভূমি ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন দুইশত পরিবার।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গৃহহারা পরিবারগুলোর মধ্যে অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ি-ঘর এবং আঙিনার মাঝামাঝি দেখা দিয়েছে ভূমি ধসের ফাটল। যে কারণে ওইসব পরিবারের কেউ কেউ তাদের আসবাবপত্র এবং ঘরের টিন ও চালা অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে। একই এলাকায় নতুন করে ভূমি ধসের আশঙ্কায় রয়েছেন প্রায় দুইশ পরিবার। এ ঘটনায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, নদীভাঙন রোধকল্পে বাঁধরক্ষা ও সংস্কারের লক্ষ্যে আলিয়ার রহমান নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নদী প্রশাসন প্রকল্পের আওতায় গঙ্গারামখালী এলাকায় গড়াই নদের পাড়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হয়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নদীর দূরবর্তী এলাকার চর থেকে বালু সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে।
ক্ষতিগ্রস্ত হারাণ বিশ্বাসসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, দেখতে দেখতে আমাদের বাড়ি-ঘর ও গাছপালা চোখের পলকে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। প্রশাসন ঠিকাদারদের কাজ বন্ধ করলেও কে শোনে কার কথা।
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এরশাদ জানান, দূরের চর থেকে বালু তুলতে তাদের ড্রেজারের সক্ষমতা ছিল না, তাই কিছুটা নিকট থেকে বালু তোলা হয়েছে । তবে এমন দৃশ্য ঘটবে সেটা তারা আগে অনুভব করতে পারেননি। এখন আমরা আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. মমতাজ মহল জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঘটনাস্থলে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এরপরও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সংবাদ পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে সংস্কার করা হবে। তবে মন্ত্রণালয়ে লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে এলে স্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে।