× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চুরি ঠেকাতে কবরের ওপর লোহার গ্রিল!

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৫৯ এএম

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০১:০০ এএম

শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নে মরদেহ চুরি ঠেকাতে কবরস্থান পাকা করে ওপরে দেওয়া হয়েছে লোহার গ্রিল। প্রবা ফটো

শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়নে মরদেহ চুরি ঠেকাতে কবরস্থান পাকা করে ওপরে দেওয়া হয়েছে লোহার গ্রিল। প্রবা ফটো

বসতঘরের পাশেই পুরোনো একটি কবর, পাশে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি। পাকা বাউন্ডারির ভেতর কবরটির ওপরে লোহার গ্রিল। পাশে থাকা ৪৫ বছর বয়সি লালবানু জানালেন কবরে কেন এমন নিরাপত্তা। লালবানুর দ্বাদশ শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে মারা যায় বছর ছয়েক আগে। প্রিয় সন্তানের মরদেহ বা কঙ্কাল চুরি হবে; এমন শঙ্কা থেকেই কবরটা ঘরের পাশে দিয়ে নিরাপত্তায় রেখেছেন। তিনি আরও জানান, এলাকায় বহু মরদেহ চুরি হয়ে গেছে। 

মরদেহ চুরি ঠেকাতে শেরপুরের বিভিন্ন কবরস্থান পাকা করে ওপরে দেওয়া হচ্ছে লোহার গ্রিল। স্থানীয়রা জানান, কবর থেকে একের পর এক চুরি হচ্ছে মরদেহ, তাই স্বজনদের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু রাখতেই এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন। তবুও কাটছে না আতঙ্ক। পুলিশ বলছে, ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে চক্রের চার সদস্য, বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, ইসলামী রেওয়াজ অনুযায়ী মৃত্যুর পর মরদেহ দাফন হয় কবরস্থানে। কিন্তু দাফনের কিছুদিন পরই চুরি হচ্ছে সেই মরদেহ। একের পর এক শেরপুরের বিভিন্ন এলাকার কবর থেকে চুরি হচ্ছে পুরোনো মরদেহ। চক্রের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও কাটছে না স্বজনদের মনের শঙ্কা।

পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি কঙ্কাল ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মাঠ পর্যায়ের চোরেরা। তা হাতবদল হয়ে যায় মূলহোতার কাছে। তারা কেমিক্যালের সাহায্যে কঙ্কালগুলো পরিষ্কার করে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন ডাক্তারসহ বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করে থাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। 

সম্প্রতি সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী, পশ্চিমপাড়া গ্রামসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় সরকারি কবরস্থান না থাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় স্বজনদের মরদেহ। পাহারার ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ পুরোনো কবর থেকে চুরি হচ্ছে মরদেহ। তাই চুরি ঠেকাতে অধিকাংশ কবরের ওপর দেওয়া রয়েছে লোহার গ্রিল। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত দেড় শতাধিক কবরে দেওয়া হয়েছে লোহার গ্রিল। আর গত দুই বছরে এই ইউনিয়ন থেকেই দেড় শতাধিক কঙ্কাল চুরি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। তারা আরও জানান, একটি কবর পাকাকরণসহ এর ওপরে গ্রিলের খরচ পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বাড়তি টাকা খরচ করতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন বলেও দাবি তাদের। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আকবর আলীর কবরও গ্রিল করা। কথা হয় তার ছেলে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার চাচি, দাদি, দাদা জেঠা ও চাচাতো ভাইয়ের মরদেহ কবর থেকে অনেক আগেই চুরি হয়েছে। একইভাবে এলাকার বহু মানুষের মরদেহ চুরি হয়েছে। মানুষ মারা গেলে মরদেহ চুরি হবে, এ শঙ্কায় আমরা সবসময় থাকি।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক হাসান আলী বলেন, আমাদের এলাকায় কেউ মারা গেলে মাইকিং করার সময়ই কবর পাকা ও রেলিং দেওয়ার জন্য লোক ঠিক করতে হয়। জানাজা শেষে কবর দেওয়া ও একই সঙ্গে গ্রিলের ব্যবস্থাও করা হয়। যদি গ্রিল না করা হয়, তাহলে কখন সেই মরদেহ চুরি হবে, এ আতঙ্কে থাকি সব সময়। তাই শোক না কাটতেই রড আর ইট-সিমেন্ট কিনে মিস্ত্রির খোঁজ করে এসব করা, বাড়তি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।

সূর্যদী পশ্চিমপাড়ার আবু জাফর বলেন, কবর থেকে মরদেহ চুরির ঘটনা রাতেই হয়। আমরা কবর পাকা করে মাটির ওপর গ্রিল দিয়ে আটকে দিই। যাতে চোর সহজেই মরদেহটি উত্তোলন করতে না পারে। অনেকে ভয়ে বাড়িলাগোয়া কবর দেয়। কেউ কবরে আলোর ব্যবস্থা করে। সরকারের কাছে আবেদন, এ গ্রামে যেন একটি সরকারি কবরস্থান দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে একজন পাহারাদারের ব্যবস্থা করা হয়।

স্থানীয় একাধিক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, একটা কবর পাকা করতে খরচ হয় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। অনেকে টাইলস করে, সেক্ষেত্রে খরচ হয় ১০ হাজার টাকার বেশি। গ্রিল করতে আরও খরচ হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার। সব মিলিয়ে একটা কবরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। আর্থিক অবস্থা যাদের ভালো তারা সহজে গ্রিল সহজে করতে পারলেও যাদের অবস্থা ভালো নয়, তাদের পক্ষে গ্রিল করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

মানবাধিকার সংস্থা সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির শেরপুর জেলার সভাপতি আলমগীর আল-আমিন হারুন বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা কবর থেকে মরদেহ চুরি হচ্ছে। আবার সামাজিক কবরস্থান থেকেও একাধিক মরদেহ এক রাতেই চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে শুধু শেরপুর সদরেই ২৫টি কবর থেকে কঙ্কাল চুরি হয়েছে। ওই বছর ৪ মার্চ রৌহা ইউনিয়নের রৌহা সামাজিক কবরস্থান থেকে অন্তত ১৪টি কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে বাজিতখিলা ইউনিয়ন থেকেও চারটি মরদেহ চুরি হয়। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কঙ্কাল চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আশা করব, কবরস্থানে থাকা মরদেহ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরালো ভূমিকা রাখবে। সামাজিক কবরস্থানগুলোয় সম্মিলিত উদ্যোগে নৈশপ্রহরী ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করলে চুরির ঘটনা কমে আসবে। 

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাইফুল্লাহ বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুটি পৃথক মামলা হয়। জেলা পুলিশের তৎপরতায় কঙ্কাল চুরির ঘটনায় নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে চার চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে চক্রের মূলহাতা দুজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদানের পর তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এরপর থেকেই চুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনও কিছু কিছু জায়গায় কবরের ওপরে গ্রিল দেখা যায়। এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ পুলিশের এই কর্মকর্তার। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা