মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৩ পিএম
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৩৫ পিএম
শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত তারপরও উদ্বোধনের ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও রংপুরে চালু হয়নি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি। প্রবা ফটো
উদ্বোধনের ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও রংপুরে চালু হয়নি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালটি। অত্যাধুনিক অবকাঠামোসহ চিকিৎসার নানা সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কালক্ষেপণে ক্ষোভ বাড়ছে রংপুরবাসীর মনে। এদিকে শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংকটে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগী ও স্বজন, চিকিৎসক-নার্সদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় শিশু হাসপাতালে ১৫ জানুয়ারি শুধু বহির্বিভাগ কার্যক্রম চালুর অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অবিলম্বে বিশেষায়িত এ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপে চালুর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
নগরীর প্রাণকেন্দ্রে সাবেক সদর হাসপাতাল এলাকায় প্রায় দুই একর জমির ওপর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রংপুর আধুনিক শিশু হাসপাতাল নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিভিল সার্জনকে ভবনটি হস্তান্তর করে। তিন তলাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে রয়েছে ইমার্জেন্সি, আউটডোর, চিকিৎসকদের চেম্বার, ল্যাব, অপারেশন থিয়েটার, ব্রোন ইউনিট, ওয়ার্ড ও কেবিন। হাসপাতাল চত্বরে আছে সুপারিনটেনডেন্ট কোয়ার্টার, ডক্টরস্ কোয়ার্টারস, স্টাফ অ্যান্ড নার্স কোয়ার্টারস, ড্রাইভার কোয়ার্টারস। বিদ্যুতের সাবস্টেশন স্থাপনের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। হাসপাতাল চালুর আগে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ায় ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য বিভাগ এ হাসপাতালকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্প্রসারিত ভবন ‘করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতাল’ হিসেবে চালু করে।
রংপুরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শিশু হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সে সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতাল মিলনায়তনে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানান, হাসপাতালের ১৫ শয্যার আইসিইউ, সিসিইউ, ৭০ থেকে ৮০টি শয্যায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। রংপুর বিভাগ ও পাশের জেলার শিশুদের চিকিৎসায় এ হাসপাতালে দ্রুত জনবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হবে।
রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘রংপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল জেলায় একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল চালু করা। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় এক বছর হতে চলল, জনবল নিয়োগ ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।’
শিক্ষক-সাংবাদিক মো. হাসেম আলী বলেন, ‘করোনার সময় আনা হাসপাতালের মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অগ্রাধিকার প্রকল্প কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, এ নিয়ে রংপুরবাসীর মনে ক্ষোভ রয়েছে। হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়াসহ বিভাগের দুই কোটি মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই শুধু বহির্বিভাগ নয়, পূর্ণাঙ্গ রূপে হাসপাতালটি চালু করা হোক।‘
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘১৫ জানুয়ারি শিশু হাসপাতালে বহির্বিভাগ চালুর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিঠি পেয়েছি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করছি, দ্রুতই বহির্বিভাগের কার্যক্রম চালু করতে পারব। পূর্ণাঙ্গ রূপে সেবা দিতে অনেক জনবলের প্রয়োজন। জনবল ও সরঞ্জাম চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’