কাপ্তাই
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৪ পিএম
খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে বন্য হাতি। প্রবা ফটো
পাহাড়-প্রকৃতিবেষ্টিত রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালার পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রজাতির বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বসবাস ছিল। তবে কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক বন্যপ্রাণি এবং গাছপালা। বর্তমানে যেসব প্রাণি বনে বসবাস করছে তারাও অনেকটা হুমকির মুখে। পূর্বে এসব বন্যপ্রাণির আবাসস্থল নিরাপদ থাকলেও বর্তমানে দেখা দিয়েছে ভিন্ন চিত্র। এখন প্রায়ই বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে বন্যপ্রাণি। তাণ্ডব চালাচ্ছে বসতবাড়িতে। ক্ষতি করছে জান-মালের।
বন্যপ্রাণির লোকালয়ে এসে এমন তাণ্ডব চালানোর কারণ হিসেবে বন বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বনে এখন বন্যপ্রাণি থাকার পরিবেশ নেই। বনের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার না পেয়ে কিংবা বন উজাড় হওয়ার ফলে বন্যপ্রাণিরা লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালাচ্ছে। বিশেষ করে বনের বৃক্ষ নিধন, বনের মধ্যে নির্বিচারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কিংবা বনের মধ্যে বসতবাড়ি নির্মাণ করার ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দিন দিন জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
সম্প্রতি রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যহাতির তাণ্ডব বেড়েছে। প্রায়ই লোকালয়ে এসে মানুষের জান-মালের ক্ষতি করছে। কিছুদিন আগে বন্যহাতির আক্রমনে এক শিক্ষার্থী মারাও গেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে হাতির আক্রমনে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে কাপ্তাইয়ের বেশ কয়েকটি পাহাড়ি এলাকা সংলগ্ন বসতবাড়িতে বানরের উৎপাত বেড়েছে। বাসাবাড়িতে ডুকে মানুষের জিনিসপত্র নষ্ট করছে। পাশাপাশি ফলমুল-সবজির ক্ষেত নষ্ট করছে।
কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা সমিরন তঞ্চঙ্গ্যা, মো. করিম মিয়াসহ একাধিক কৃষক বলেন, বানরের যন্ত্রনায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। অনেক কষ্ট করে আমরা চাষাবাদ করি। কিন্তু আমাদের ফসল সাবার করে ফেলছে বানর। বাগানের শিম, পেঁপে, আতা ফল, পেয়ারা, কলাসহ বিভিন্ন ফল নষ্ট করছে বানরের দল।
একই এলাকার হালিমা বেগম ও রাবেয়া খাতুন বলেন, কিছুক্ষণ পর পর বানর এসে ফলমূল নষ্ট করে ফেলছে। বাসাবাড়ির ঘরের টিন বানর যাতায়াত করতে করতে নষ্ট করে ফেলছে। বানরের এমন উৎপাত আমরা আগে দেখিনি।
কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নের ডংনালার বাসিন্দা সামাউ মারমা, চিংহ্লা মারমাসহ কয়েকজন বলেন, আমরা এখন প্রতিদিন বন্যহাতির আক্রমনের ভয়ে দিন পার করি। বন্যহাতির উৎপাত হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। হাতির পাল এসে বাসাবাড়ির যেমন ক্ষতি করছে, তেমনি ফসল নষ্ট করে ফেলছে। আমরা তাড়াতে গেলেও কাজ হয় না। পরে বন বিভাগকে খবর দিলে তারা এসে হাতি তাড়ানোর ব্যবস্থা করে। ডংনালার মতো কাপ্তাইয়ের পাহাড়বেষ্টিত চিৎমরম কিংবা কাপ্তাই ইউনিয়নেও বেড়েছে বন্যহাতির আক্রমন। ফলে এসব এলাকার মানুষ সব সময় আতক্ষে থাকে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, বন্যপ্রাণি হলো আমাদের বনজ সম্পদ, আমাদের ঐতিহ্য। এরা বন থেকে লোকালয়ে আসছে খাদ্য সংকটের কারণে। বনের মধ্যে পযাপ্ত খাবার না থাকার কারণে লোকালয়ে আসছে। তাই বলে বন্যপ্রাণি হত্যা করা, বিরক্ত করা বা আহত করা যাবে না। বন্যপ্রাণি দ্বারা কোনো মানুষ হত্যা, আহত হওয়া বা কোনো ধরনের ঘরবাড়ি নষ্ট হলে সরকারের তা পুষিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে।
এই বন কর্মকর্তা জানান, হাতি লোকালয়ে আসার ফলে চলতি মাসে মাইকিং করে সাধারণ লোকজনকে সর্তক করা হয়েছে।