× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কুমিল্লা

জোর লড়াইয়ের আভাস মিলছে আগেভাগেই

তৈয়বুর রহমান সোহেল, কুমিল্লা

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৯ পিএম

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:১২ পিএম

জোর লড়াইয়ের আভাস মিলছে আগেভাগেই

হিসাবে আরও সাড়ে ৩ বছর পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু মেয়াদ অপূর্ণ রেখেই গত ১৩ ডিসেম্বর মারা যান এ সিটির মেয়র আরফানুল হক রিফাত।সেই শূন্যতা পূরণে ৯০ দিনের বাধ্যবাধকতা থেকেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ৯ মার্চ। গত বুধবার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন শেষ হতে না হতেই কুমিল্লা শহরে আবার বইতে শুরু করেছে ভোটের নতুন হাওয়া।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। ওই নির্বাচন ছিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। ভোটের তীব্র লড়াইয়ে আরফানুল হক রিফাত বিজয়ী হন। তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে হারান। 

স্বাভাবিকভাবেই কুমিল্লা শহরজুড়ে এখন নানা আলোচনা চলছে সিটি নির্বাচন ঘিরে। সম্ভাব্য প্রার্থী কারা সেটাই আলোচনার একটা বড় বিষয়। এরই মধ্যে ধারণা পাওয়া গেছে যে, আওয়ামী লীগ এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী দেবে না। সেটা হলে এবার আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক নেতা প্রার্থী হতে পারেন। প্রতীক না দিয়ে যদি দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্য প্রার্থী কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছে। তিনি এখন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছেন। সেটা হতে না পারলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেন। তবে শেষপর্যন্ত সীমা অংশ না নিলে তার বলয়ের নূর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম, আনিসুর রহমান মিঠু ও কবিরুল ইসলাম শিকদারের মধ্যে কারও না কারও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে প্রয়াত মেয়র রিফাত পরিচিত ছিলেন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী হিসেবে। তার মৃত্যুর ফলে বাহারের অনুসারীদের মধ্যে সিটি করপোরেশন মেয়র পদে লড়ার মতো শক্তিশালী প্রার্থীর কিছু শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এমপি বাহারের বড় মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন চাইতে পারেন। তবে তাকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বানানোর চেষ্টাও করছেন বাহার। সেই চেষ্টা সফল হলে সিটির উপ-নির্বাচনে বাহারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল ও কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ সভাপতি আবদুল্লাহ মাহমুদ সহিদ দলীয় মনোনয়ন অথবা সমর্থন চাইবেন। শেষ পর্যন্ত প্রার্থী কে হবেন সেটা নির্ভর করবে বাহারের চাওয়ার ওপর।

জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই। আশা করি, দলের সবাই আমার জন্য কাজ করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য আনিসুর রহমান মিঠু বলেন, একজন সাধারণ প্রার্থী হিসেবে আমি সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। যদিও দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নূর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, আমার সারাজীবনের সাধনা এই সিটি নির্বাচন। দলের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আশা করি, দল আমাকে বঞ্চিত করবে না।

এদিকে গত সিটি নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারও উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে সাক্কু ৩৪৩ ভোটে হারেন। কায়সার পান প্রায় ২৯ হাজার ভোট।

উপ-নির্বাচনের বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দল করেছি। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আমি তাদের সঙ্গে আলাপ করব।

নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমি এবারও নির্বাচন করব। আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন। তারা আমার জন্য কাজ করবেন।

২০১১ সালের ১০ জুলাই কুমিল্লার সদর ও সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে একীভূত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রতিষ্ঠার ছয় মাসের মাথায় ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি এখানে প্রথম নির্বাচন হয়। শহরটিতে অসংখ্য পুকুর-দিঘি ছিল। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর নগরায়ণের প্রভাবে বড় বড় ভবনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আবাসিক ভবনের পাশাপাশি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়ে যায়। সে সঙ্গে বেড়ে যায় যানবাহনও। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছরেও নগরীর আয়তন বাড়েনি। শহর সম্প্রসারিত না হওয়ায় শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালগুলো শহরের গুটিকয়েক জায়গার মধ্যেই গড়ে উঠেছে।

ফলে এসব এলাকায় যানচলাচলও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। অপরিকল্পিত ভবনের কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ ভবন মালিক বাড়তি জায়গা না রেখেই ভবন নির্মাণ করেছেন। সড়ক হচ্ছে তাদের পার্কিংয়ের জায়গা। অনেক হাসপাতাল মালিক অ্যাম্বুলেন্স রাখার জন্য গ্যারেজের ব্যবস্থা করেননি। রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অপরিকল্পিত মার্কেট। ফুটপাথগুলো দখল হয়ে গেছে। যে কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক নাগরিক সুযোগ-সুবিধাই এখন নিশ্চিত করা যায়নি। অথচ শহরে জনবসতি বেড়েছে কয়েকগুণ। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ইপিজেড ও বিসিক ছাড়া শহরে তেমন কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও তেমন উন্নত হয়নি। লোকসংখ্যার অনুপাতে পাবলিক টয়লেট নেই। 

সিটি নির্বাচন ও কুমিল্লার উন্নয়নের বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা বদরুল হুদা জেনু বলেন, আমাদের প্রত্যাশার শেষ নেই। তারপরও কিছু কাজ না হলেই না। সিটি করপোরেশন হওয়াতে কিছু কাজ করার জায়গা তৈরি হয়েছে। শহরের সৌন্দর্যবর্ধন হয়েছে, রাস্তাঘাটও হয়েছে। কাজের মান কী হয়েছে সেটা ভিন্ন বিষয়। এবার টেকসই সিটি করপোরেশন চাইব। নতুন মার্কেটগুলোতে সিনে কমপ্লেক্স করা দরকার। কুমিল্লার মানুষ ভালো সিনেমা হলের সংকটে ভুগছে। সবগুলো মার্কেট, নগর উদ্যান ও চলাচলের স্থানে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা শৌচাগার করতে হবে। কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দুটিতে ভালো স্কুল-কলেজ আছে। দক্ষিণ ও উত্তরের ওয়ার্ডগুলোতে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। শহরের প্রবেশমুখগুলোর সড়ক যথাসম্ভব ডাবল লেন করতে হবে।

কুমিল্লার ইতিহাসবিষয়ক গবেষক আহসানুল কবির বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক আছে। কুমিল্লায় নাগরিক প্রত্যাশা তেমন একটা পূরণ হয়নি। আমি জনবান্ধব, কল্যাণমুখী, আইনের শাসন আছেÑ এমন একটি কুমিল্লা শহর দেখতে চাই।

কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাবুল বলেন, পুরাতন গোমতীতে রিসোর্ট করার পরিকল্পনা ছিল, তার বাস্তবায়ন দরকার। যথাযথভাবে ভবনের নকশা অনুমোদনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। নগর পরিবহনের ব্যবস্থা না করে অটোরিকশা ও রিকশার ওপর হাত দেওয়া যাবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা