× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নওগাঁয় ছয় শতাধিক গ্রাহকের ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘ডলফিন’

নওগাঁ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৬ পিএম

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১৫ পিএম

ডলফিন সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। প্রবা ফটো

ডলফিন সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। প্রবা ফটো

নওগাঁয় ‘ডলফিন সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই সংস্থায় জীবনের শেষ সঞ্চয় রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছে অন্তত ছয় শতাধিক গ্রাহক। কষ্টের অর্জিত টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।

জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারে ২০১৩ সালে সমবায় থেকে নিবন্ধন নিয়ে ‘ডলফিন সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তোলেন একই গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। যেখানে বিভিন্ন গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্থায়ী আমানত ও ক্ষুদ্র সঞ্চয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। গ্রাহকদের প্রতি লাখে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা দিতেন। হঠাৎ করেই এ সংস্থার পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক উধাও হয়ে গেছেন। গত এক সপ্তাহ থেকে ওই অফিসের প্রধান গেটে তালা ঝুঁলছে। গ্রাহকরা অফিসে এসে তালা দেখে ফিরে যাচ্ছে। 

গ্রাহকরা জানায়, বাড়তি লাভের আশায় কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য, কেউ বিদেশ যাওয়ার জন্য, কেউ বা গরু-ছাগল বিক্রির টাকা আবার কেউ দিনমজুরি করে টাক আয় করে জীবনের শেষ সঞ্চয় রেখেছিলেন এ সংস্থায়। মুনাফাও পেতেন তারা। তবে বিপত্তি বাধে মূল টাকা ফেরত চাইলে। এতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পরিচালকের বিরুদ্ধে। হঠাৎ করে সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করে পরিচালক পালিয়ে যাওয়ায় এখন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ পথে বসার উপক্রম। 

পাওনা টাকার জন্য ‘ডলফিন সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের অফিসের সামনে গ্রাহকদের ভিড়

ফতেপুর গ্রামের দিনমজুর আলম হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,  ‘অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চলে আমার। দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থা। দুই মেয়ে। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে গত কয়েক বছর এ সংস্থায় দেড় লাখ টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। কিন্তু আমার সব শেষ হয়ে গেল। এখন পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।’

সাইদুল ইসলাম নামে আরেক গ্রাহক বলেন, ‘কাজ করে সংসারের খরচ বহনের পাশাপাশি প্রায় ১ লাখ টাকা গুছিয়ে গত কয়েক বছর আগে এ সংস্থায় রেখেছিলাম। প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে লাভ পেতাম। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় কয়েক মাস ধরে ঘুরে ঘুরে ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করি। কয়েকদিন থেকে অফিস তালাবদ্ধ। মালিক আব্দুর রাজ্জাককে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাড়িতেও তালা দেওয়া।’

গৃহবধূ মাসুদা বানু বলেন, ‘বাড়ির পাশেই এনজিও। বিদেশ যাওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা রেখেছিলাম। বলতে গেলে আমার কাছ থেকে জোর করেই দশ মাস আগে টাকা নিয়েছে আব্দুর রাজ্জাক। লাখে আড়াই হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা থাকলেও ২ হাজার করে দিতেন। গত চার মাস থেকে মূল টাকা নেওয়ার জন্য তাগাদা দিয়ে আসছিলাম। টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করছিল এবং হুমকিও দিচ্ছিল। এখন তো পালিয়ে গেছে। টাকা পাব কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

গৃহবধূ নাহিদা আক্তার বলেন, ‘স্বামীকে না জানিয়ে এ সংস্থায় দেড় লাখ টাকা রেখেছিলাম। স্বামী পরে জানতে পারে। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়। আমরা যারা টাকা রেখেছে সবারই কষ্টের টাকা। কষ্টে উপার্জিত টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’

আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ‘বাড়ির মূল দরজায় তালাবদ্ধ। তবে আব্দুর রাজ্জাকের বড় ভাইয়ের বাড়িতে বসবাস করছেন তার বাবা-মা। আব্দুর রাজ্জাকের মা মরজিনা বেগম বলেন,  ছেলে এক সময় বিদেশ ছিল। এরপর গ্রামে এসে বিভিন্ন দোকানে কাজ করে। এরপর একটি এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) দেয়। গত কয়েক দিন থেকে ছেলেকে দেখা যাচ্ছে না। তবে কীভাবে কত টাকা লেনদেন করেছে একমাত্র ছেলেই বলতে পারবে।

নওগাঁ জেলা সমবায় অফিসার খোন্দকার মনিরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত বছরের জুনে ওই সংস্থা পরিদর্শন করে ৩৮ লাখ টাকা আমানতের তথ্য পাওয়া যায়। তবে ৬ মাসের ব্যবধানে কোটি কোটি টাকা কীভাবে লেনদেন হয়েছে যা অসম্ভব। তবে সমিতিকে সামনে রেখে বা সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে গোপনে আত্মসাতের জন্য লেনদেন করেছে কি না সে বিষয়টিও দেখা হবে। গত কয়েক দিন আগে কয়েকজন ভুক্তভোগী এসে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে। যদি এ ধরনের কোনো সত্যতা পাওয়া যায় তবে ওই সংস্থার নিবন্ধন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা