× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘কম্বলটা গাওত দিয়া আরাম করি নিন পারব্যার পামো’

গাইবান্ধা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫২ পিএম

আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১০ পিএম

আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের উদ্যোগে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ মাঠে ৩০০ শীতার্ত পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। প্রবা ফটো

আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের উদ্যোগে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ মাঠে ৩০০ শীতার্ত পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। প্রবা ফটো

‘হামার ঠান্ডার কাপড় দুখ্যান, এখান পুরান খ্যাতা (কাঁথা)। তাক দিয়া কোনোমোতো আইত কাটাই। সারা আইত একাত-ওকাত করি পার করি। ঠান্ডার জইন্যে নিন (ঘুম) ধরে না, বাবা। আচকে তোমারঘরে কম্বলখ্যান প্যায়্যা খুব ভালো হইলো। আইতোত কম্বলটা গাওত দিয়া আরাম করি নিন পারব্যার পামো।’এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার দক্ষিণ ধানঘড়া গ্রামের বৃদ্ধা মছিরন বেওয়া।

বৃদ্ধা মছিরন বেওয়াসহ সারা দেশের মানুষ যখন শীতে জবুথবু তখন ‘শীতার্তের জন্য ভালোবাসা’এই স্লোগানকে সামনে রেখে অসহায়, দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের উদ্যোগে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ মাঠে ৩০০ শীতার্ত পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সুশান্ত কুমার মাহাতো।



গাইবান্ধায় প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রার পারদ। আজ এ জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাড় কাঁপানো শীতে নিদারুণ কষ্টে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে নদী ভাঙন এলাকার মানুষ অর্থের অভাবে কিনতে পারছে না গরম কাপড়। 

জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ক্লিনিকগুলোতে শীতজনিত রোগ নিয়ে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ভিড় বাড়ছে। এদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর ও অ্যাজমাসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। সরকারি পর্যায় থেকে শীতার্ত মানুষের জন্য যতটুকু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এরকম একটা সময়ে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের সহযোগিতায় ৩০০ শীতার্ত পরিবারের মাঝে পরিবার প্রতি একটি করে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আর প্রয়োজনের এই সময়ে কম্বল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা এসব শীতার্ত মানুষ।



পাঁচ মাসের শিশুসন্তান কোলে নিয়ে সদর উপজেলার কচুয়ার খামার গ্রাম থেকে কম্বল নিতে আসেন করিমন বেগম। তিনি বলেন, ‘শীতের রাইতত ছওয়াটার খুবি কষ্ট হয়। এই কম্বল বাচ্চাটাক শীত থাকি রক্ষা কইরবে।’

দক্ষিণ ধানঘড়া গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব সাদা রানী কম্বল হাতে পেয়ে বলেন, ‘সন্দ্যাত (সন্ধ্যা) থাকি আগুন জ্বলেয়া থাকি। সোয়ামিক (স্বামীকে) কোছিলাম একটা কম্বল আনার জন্যে। কিন্তু তায় কিনি আনব্যার পায় নাই। তোমরা হামাক কম্বল দিবার আচ্চেন, আল্লায় তোমার ঘরে ভালো করুক।’

প্রচণ্ড শীতে যখন দিশাহারা অবস্থা সেই সময় এমন উপহার পেয়ে একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কয়ছার আলী বলেন, ‘এদান জারোত থাকা খুব কষ্ট হয়া গ্যাছে। আইতত পাও ঠান্ডা হতি হতি আইত পার হয়্যা যায়। তাও ঠান্ডার জইন্যে ঘুম ধরে না। এই বয়সত ইনকাম কমি গেইছে। গরম কাপড় কেনার ট্যাকা নাই। চেয়ারম্যান-নেম্বর কাঁইও কোনো কম্বল দেয় না। আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের এই কম্বলখ্যান দিয়্যা মোর খুব উপক্যার হইলো।’

রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, ‘হামার সোংসারোত দুটে মানুষ। কিন্তু কারো ঠান্ডার কাপড় নাই। দুকনে চিরে খ্যাতা আর এ্যাকনা কম্বল দিয়া আইত কাটাই। এই কম্বলখ্যান যে হামার কতো উপকারে নাই গবে তাক তোমাক বুইঝব্যার পাবার নাও।’ 

শুধু জলিলই নয়, আনারুল ইসলাম, রমিসা বেওয়া, খাদিজা খাতুনসহ আরও অনেকে এমন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তারা প্রত্যেকে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং তাদের জন্য মঙ্গল কামনা করেছেন।


কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি ছিলেন গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নদ-নদী ও চরবেষ্টিত এ জেলার প্রত্যন্ত এলাকার শীতার্ত মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমন সময়ে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তাদের এমন উদ্যোগ দেখে যেন আরও অনেকেই এসব শীতার্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের জন্য শুভ কামনা রইল।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ বলেন, ‘শুধু উত্তরাঞ্চল নয় সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা সারা বছর বিভিন্ন দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। তারই অংশ হিসেবে গাইবান্ধায় আমাদের আজকের এই উদ্যোগ। এই উদ্যোগে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

প্রতিদিনের বাংলাদেশের ফিচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ বলেন, ‘প্রচণ্ড শীতে দরিদ্র মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তাদের কষ্ট লাঘবে আমাদের এ উদ্যোগ। সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিদিনের বাংলাদেশ সূচনালগ্ন থেকে সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি দুস্থ মানুষের পাশে থেকেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আল-খায়ের ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে আজ আমরা গাইবান্ধায় এসেছি।’ 

প্রেস ক্লাব গাইবান্ধার সভাপতি খালেদ হোসেন বলেন, ‘গাইবান্ধার দরিদ্র শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশকে প্রেস ক্লাব গাইবান্ধার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এই দুঃসময়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আগামীতেও এসব অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য পাশে থাকবে এমনটাই কামনা করছি। মানবতার কল্যাণে তাদের পথচলা অব্যাহত থাকুক।’

প্রতিদিনের বাংলাদেশের গাইবান্ধা প্রতিবেদক রিপন আকন্দের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  আল-খায়ের ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারাসহ প্রেসক্লাব গাইবান্ধার সাধারন সম্পাদক জাভেদ হোসেন ও বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা