ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:২৮ পিএম
শ্রীমঙ্গল বিসিক নগরী। প্রবা ফটো
মৌলভীবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত উপজেলা শহর শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) অর্ধেকেরও বেশি প্লট বরাদ্দ হয়নি। আবার যেগুলো বরাদ্দ হয়েছে সেখানেও গড়ে ওঠেনি কোনো কারখানা। ফলে দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকা বিসিকের সীমানার ভেতরের পুরো এলাকা জঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। সেখানে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। চুরি হচ্ছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার।
বিসিক মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্র জানায়, বিনিয়োগকারীদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে উত্তরসুর এলাকায় ২০১২ সালের ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিসিকের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমি উন্নয়ন করে কারখানা স্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয় ৬ হাজার ও ৪ হাজার ৫০০ স্কয়ার ফুটের ১১৯টি প্লট। একাধিক অফিস ভবন, পাম্প হাউস এবং কোয়ার্টার, ডাম্পিং ইয়ার্ড, মসজিদসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধারও ব্যবস্থা করা হয়।
উদ্বোধনের প্রথম বছরে মাত্র তিনটি প্লট বরাদ্দ হয়েছিল। সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান গ্রহীতারা। পরে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে বিসিক শিল্পনগরী। চতুর্থ বছরে কর্তৃপক্ষের নানা তৎপরতায় একটি প্রতিষ্ঠানের ৪০টিসহ মোট ৫১টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাঁচামালের প্রাপ্যতা থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি। কারখানা গড়ে তোলার কোনো কার্যক্রমও নেই। যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন তারা অনেকটা হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন।
দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় বিসিকের পুরো এলাকা জঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়ে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে তিনবারে পাঁচটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। প্রতিবার ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও এ শিল্পনগরীতে প্লট ক্রয়ে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে।
আর এ আগ্রহ না থাকার কারণ হিসেবে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে জমির বাজার মূল্য থেকে বিসিকের প্লটের মূল্য কয়েকগুণ বেশি। শুধু তাই নয় পার্শ্ববর্তী জেলা সদর মৌভীবাজারে বিসিকের চেয়েও শ্রীমঙ্গল বিসিকের প্লটের মূল্য বেশি। এ ছাড়া প্রচারণা ও নিরাপত্তার অভাব এবং বিসিক পরিচালনার লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তারা এখানে প্লট বরাদ্দ নিতে তেমন আগ্রহী হচ্ছেন না।
স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আশপাশের জমির চেয়ে শ্রীমঙ্গল বিসিকের জমির দাম কয়েকগুণ বেশি। তাই সরকার ভর্তুকি দিয়ে প্লট বরাদ্দ এবং কারখানা স্থাপনে সহজ শর্তে ঋণ না দিলে এ শিল্পনগরী জমে ওঠার সম্ভবনা কম। তারা জানান, মৌলভীবাজার বিসিকের প্রতি শতক জমির মূল্য ৩ লাখ টাকা। সেখানে শ্রীমঙ্গল বিসিকের প্রতি শতক জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। অথচ শ্রীমঙ্গল বিসিকের পার্শ্ববর্তী এলাকার সড়কের পাশে প্রতি শতক জমির মূল্য সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে।
টি প্ল্যান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল সারা দেশের মধ্যে একটি ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র। উপজেলায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কয়েক বছর ধরে চলমান রয়েছে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র। বিসিক নিয়ে আমাদের বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু জমির মূল্য বেশি হওয়ায় এবং নানা কারণে অর্ধেক প্লটও বরাদ্দ হয়নি। এ ছাড়া জমি বরাদ্দ পেতে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সেই ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ডও নেই।’
জানতে চাইলে বিসিক মৌলভীবাজারের উপমহাব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন ভুইয়া বলেন, ‘যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছে তারা কাজ করছে না। ফলে বিসিকের ভেতরে কোনো কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কারখানা নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করতে বলেছি। বাকি প্লটগুলো বরাদ্দে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এখানে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হয়নি। তবে মৌলভীবাজার বিসিকের একজন করে কর্মকর্তা ও গার্ড অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করছেন।’ আশপাশের থেকে জমির মূল্য কয়েকগুণ বেশি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্লটের দাম প্রধান কার্যালয় নির্ধারণ করেছে। এখানে আমাদের বলার কিছু নেই।’