এম পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৬ পিএম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পাঠামারা হাজীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতে গোনা শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলে পাঠদান। প্রবা ফটো
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নে ৩০৭নং দক্ষিণ পাঠামারা হাজীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০০৬ সালে স্থাপিত হলেও ২০১৩ সালে জাতীয়করণের আওতায় আসে। সেই সময় থেকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন জমিদাতা আব্দুল জলিল শেখ। এক বছর আগে সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি করা হয়নি। এখনও তিনিই দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার আব্দুল জলিল শেখের পুত্রবধূ। আরেক সহকারী শিক্ষক নাসরিন আক্তারের ননদ। তাই তারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। এ ছাড়া কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৭৬ জন দেখানো হলেও সরেজমিনে প্রতি ক্লাসে ৩-৪ জন করে শিক্ষার্থী দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুল জলিল শেখ পরপর দুই বারে ৬ বছর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। গত বছরের মার্চে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় দ্বন্দ্বে কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ঝুলে থাকে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। পরে পূর্বের সভাপতি জলিল শেখই ম্যানেজিং কমিটির সব কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনকল্পে চলতি কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটি অথবা সর্বসমর্থিত কমিটি হতে হবে। বর্তমান এ প্রজ্ঞাপনে বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম বিএ পাস থাকতে হবে। সেখানে স্বঘোষিত সভাপতি জলিল শেখের রয়েছে এসএসসি পাস।
বিদ্যালয়ের উন্নয়নকল্পে সরকারি বরাদ্দের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ অভিভাবকদের মধ্যে।
কাগজে-কলমে এ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৭৬ জন। তবে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, দ্বিতীয় শিফটে চতুর্থ শ্রেণিতে ৩ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৬ শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাঁচটি পদ থাকলেও প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল শেখের পুত্রবধূ নাসরিন আক্তার। আর নাসরিন আক্তারের ননদ শেফালী আক্তার সহকারী শিক্ষিকা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দের কোনো হিসাবনিকাশ নেই। ছাত্র-ছাত্রী কমল নাকি বাড়লÑ এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই শিক্ষকদের। কোনোমতে মাস পার করতে পারলেই হয়। শিক্ষকরাও ঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে আসেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে একাধিকবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার বলেন, গত বছরের ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ থেকে বিদ্যালয়ের রঙের কাজ করানো হয়েছে। সভাপতি পদে তার শ্বশুর জলিল শেখ দুইবার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার, সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ একটি টিম স্কুলে এসেছিল। জটিলতার কারণে কমিটি গঠন হয়নি। তবে পূর্বের কমিটিই ম্যানেজিং কমিটির কাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, ধান কাটার মৌসুমে বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে ধান সংগ্রহে মাঠে নেমে যায়। তাই শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটি গঠন হয়নি। গত বছর মার্চ মাসে এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়েছিল। আমার জানামতে জটিলতার কারণে নতুন কমিটির তালিকা ঝুলে ছিল। পরে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার সহকারী শিক্ষা অফিসার বিষয়টি অবহিত না করায় হ্যাঙ্গিং অবস্থায় রয়ে গেছে। তবে এখন নতুন করে একজন সহকারী অফিসারকে ওই ক্লাস্টারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।