কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৬ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:১২ পিএম
রাতে পাহাড় কেটে মাটি পাচারকালে ইউপি সদস্যের একটি ডাম্পার ট্রাক আটক করেছে পুলিশ। প্রবা ফটো
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় এবার ইউনিয়ন পরিষদের দুই সদস্যের নেতৃত্বে শতাধিক পাহাড় কেটে সাবাড় করার খোঁজ মিলেছে। প্রতি গাড়ি মাটির জন্য বন কর্মকর্তাকে ৩০০ টাকা ঘুষ দেওয়া হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
খোদ বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের সদস্য মো. শাহজাহান ও তুর্জয় চৌধুরী রিগ্যানের নেতৃত্বে একটি চক্র শতাধিক পাহাড় থেকে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। তারা পশ্চিম হলদিয়া প্রাইমারি স্কুলের উত্তরে আমির হোসেন পয়েন্ট, জামবাগান ফরেস্ট অফিসের উত্তরে, বাগ্গুলা মার্কেটের উত্তরে মাহাবুর বাসায় বিশাল পয়েন্ট, পাগলিরবির, মধুঘোনা, উত্তর ও দক্ষিণ বড়বিল, পাতাবাড়িসহ শতাধিক পয়েন্ট থেকে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করে আসছে। এমনি পাশের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার পাহাড়ও সাবাড় করছে চক্রটি।
এ ঘটনায় রবিবার রাতে পাহাড় কেটে মাটি পাচারকালে উপজেলার হলদিয়া ইউপি সদস্য মো. শাহজাহানের মালিকাধীন একটি ডাম্পার ট্রাক আটক করেছে পুলিশ। বন বিভাগ কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগের বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলম আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, ইউপি সদস্য মো. শাহজাহানের দুটি ডাম্পার ট্রাক রয়েছে। অপর ইউপি সদস্য রিগ্যানেরও একাধিক ডাম্পার ট্রাক রয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, হলদিয়া বিট কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালামকে প্রতি গাড়ি মাটির জন্য ৩০০ টাকা দেওয়া হয়। তবে মো. আব্দুস ছালাম অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এসব চক্রের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে।’
উখিয়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা গাজী মুহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ শাহজাহানের ড্রাম ট্রাক অবৈধভাবে পাহাড়ের মাটি কাটার সময় ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় শাহজাহান নিজেই জড়িত এবং তিনি নিজেই নেতৃত্ব দেন।’
শফিউল বলেন, ‘বন ও পাহাড়খেকোদের দৌরাত্ম্য থামাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বন বিভাগ। জনবল সংকটের পরও বন ও পাহাড় রক্ষায় রাত-দিন নিরলস কাজ করছি। গত এক সপ্তাহে উখিয়ায় চারটি অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ ও বিপুল পরিমাণ কাঠ জব্দ করা হয়েছে।’ সোমবারের (২২ জানুয়ারি) অভিযানের বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তানভীর হোসেন বলেন, ‘বন ও পাহাড় ধংসকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ এ ঘটনায় দুই ইউপি সদস্যের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। ২০ জানুয়ারি উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নে পাহাড় কাটার সময় মুসলিম উদ্দিন নামে শ্রমিক নিহত হলে জানা যায়, উখিয়া উপজেলায় এক মাসের মধ্যে একটি পাহাড় কেটে প্রায় এক একর জায়গা সমভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। অথচ এই পাহাড়ের আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বন বিভাগের বিট কার্যালয়। বন বিভাগ ও পরিবেশ দপ্তর এসব বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু মামলা দিয়েই দার সারছে বলে পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করে আসছেন।