আল-খায়ের ফাউন্ডেশন-প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর উদ্যোগ
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫২ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৫ পিএম
চিলমারীতে শীতার্তদের মাঝে ‘আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রবা ফটো
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের উদ্যোগে ২০০ শীতার্ত পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চিলমারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান আজাদ জামান।
সারা দেশের মানুষ যখন শীতে জবুথবু তখন আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ ‘শীতার্তের জন্য ভালোবাসা’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে অসহায়, দুঃস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সূর্যের দেখা নেই। রাতভর তুষারের মতো ঝরছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে দুই-হাত সামনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। তাই হেড লাইট জ্বালিয়ে চালানো হচ্ছে যানবাহন।
হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে গোটা চিলমারী। নিদারুণ কষ্টে জীবন-যাপন করছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। বিশেষ করে নদী ভাঙা হতদরিদ্র পরিবারের মানুষরা তীব্র শীতে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অর্থের অভাবে কিনতে পারছেনা গরমের কাপড়।
শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই শীতের প্রকোপে আক্রান্ত। ছড়িয়ে পড়ছে শীতজনিত নানা রোগ। সরকারি পর্যায় থেকে শীতার্ত মানুষের জন্য যতটুকু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এরকম একটা সময়ে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় ২০০ শীতার্ত পরিবারের মাঝে পরিবার প্রতি একটি করে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আর সেই কম্বল পেয়ে তারা মহা খুশি।
কুয়াশার চাদরে ঢাকা সকালে একটি মোটা কম্বল হাতে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন উপজেলার রমনা ইউনিয়নের মিস্ত্রি পাড়ার ঘটকু রবিদাস। তিনি পেশায় একজন মুচি।
প্রয়োজনের সময় এ ধরনের উপহার পাওয়ার পর তিনি বলেন ‘কি কোঁও বাজান, আনাম শীত কোনা যাবার নাইগছে, খ্যাতা নাই- কম্বল নাই। জারতে আইতোত নিন পাইরব্যার পাও না। চেয়ারম্যান-মেম্বার কাঁইও মোক দ্যাকে না- একনা কম্বলও দেয় না। আল-খায়ের ফাউন্ডেশন এই কম্বল খ্যান দিয়্যা মোর খুব উপক্যার কইরলে।’
বরান সরকারের গ্রামের সত্তরউর্ধ আমেনা বেওয়া কম্বল হাতে পেয়ে বলেন, ‘এই কম্বলখ্যান যে মোর কতো উপকারে নাইগবে তাক তোমাক বুইঝব্যার পাবার নাও।’
প্রায় একই ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন মিস্ত্রি পাড়ার গোপিলাল রবিদাস, জোড়গাছ বাধ এলাকার রিনা বেগম, পাগাল পাড়া এলাকার রোকেয়া বেগম, সোনারী পাড়া এলাকার মনোয়ারা বেগম। তারা সবাই আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করেছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান আজাদ জামান বলেন, ‘আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ- দেশের প্রত্যন্ত এলাকা চিলমারীতে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণের মাধ্যমে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। তাদের সাফল্য কামনা করছি।’
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ- আজ যে কম্বল বিতরণ করল, তা এই এলাকার অসহায়, দরিদ্র ও শীতার্ত মানুষের অনেক উপকারে আসবে। এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আবেদন জানাচ্ছি।’
প্রতিদিনের বাংলাদেশের ফিচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ বলেন, 'সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিদিনের বাংলাদেশ সূচনালগ্ন থেকে সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি দুস্থ মানুষের পাশে থেকেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ চিলমারীতে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। মানবিক এ কাজে আমাদের বরাবরের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন।'
স্থানীয় চিলমারী প্রেস ক্লাবের সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু জেয়াদ আজাদ বিল্পব বলেন, ‘অবহেলিত চিলমারী এলাকার প্রত্যন্ত রমনা ইউনিয়নে আল-খায়ের ফাউন্ডেশন দরিদ্র শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে চিলমারীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার-সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানের জন্য পত্রিকাটিকেও ধন্যবাদ জানাই।’
কম্বল বিতরণ শেষে চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহীন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আল-খায়ের ফাউন্ডেশন উল্লেখ করার মতো ত্রাণ সামগ্রী ইতোপূর্বেও চিলমারীতে বিতরণ করেছে। দুই সপ্তাহ থেকে চিলমারীতে কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। ঠিক এই সময় আল-খায়ের ফাউন্ডেশন ও দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সহযোগিতায় আজ যে কম্বল বিতরণ করল, তা অর্থবহ হয়েছে। কম্বলগুলি হতদরিদ্র মানুষজনের খুব উপকারে আসবে। ভবিষ্যৎতে যেন সরকারের পাশাপাশি আল-খায়ের ফাউন্ডেশন এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।’
কম্বল বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আল খায়ের ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার গোলাম সাঈদ, প্রোগ্রাম অফিসার কমলজিৎ শাওন, দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার পত্রিকাটির চিলমারী প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদা পারভেজ ও গণকমিটির পক্ষে নাহিদ নলেজ।