কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৪ পিএম
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪২ এএম
প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ভুয়া চিকিৎসক মো. হারুন। প্রবা ফটো
মেঘনায় মাছ শিকার
করে জীবিকা চালাতেন লক্ষ্মীপুরের মো. হারুন। অভাব-অনটনে ছেলেমেয়ে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে
দিন কাটত তার। নেই ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। হঠাৎ করে তিনি হয়ে গেলেন ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসক। প্রতারণার মাধ্যমে মাত্র কয়েক বছরে লাখপতি বনে গেছেন তিনি।
জেলার কমলনগর
উপজেলার ভক্তপাড়া গ্রামে বসবাস তার। নাম হারুন হলেও লোকজন তাকে হারুন খোনার নামে চেনে।
এ পর্যন্ত কথিত এই খোনারের ঝাড়ফুঁকের খপ্পরে পড়ে নিজ গ্রামসহ দূরদূরান্তের অসংখ্য নারী-পুরুষ
সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলার
চরলরেন্স এলাকার এক গৃহবধূ এই খোনারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাকে নোয়াখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান।
বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই গৃহবধূ। এতে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার
হয় গৃহবধূর পরিবার। এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন হারুন খোনার।
ভুক্তভোগী গৃহবধূর
স্বামী সফি উল্লাহ বলেন, তার স্ত্রী কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। প্রতিবেশী এক নারীর
পরামর্শে হারুন খোনারের কাছে গেলে তিনি দুই কান চেপে ধরে জোরে থাপ্পড় দিয়ে ঝাড়ফুঁক
করেন। এতে তার স্ত্রীর কানের পর্দায় বড় ধরনের আঘাত লাগে। একপর্যায়ে দুই কানে যন্ত্রণা
শুরু হলে তাকে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে নোয়াখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে
গেলে চিকিৎসক তার স্ত্রীর কানের পর্দা ফেটে গেছে বলে জানান।
ঘটনাটি এলাকার
গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জানালে হারুন খোনার নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চান। পরে ওই নারীর
চিকিৎসার সব খরচ বহন করার অঙ্গীকার করেন। এ পর্যন্ত চিকিৎসা খরচের ৪০ হাজার টাকা হারুন
খোনার তাকে দিয়েছেন বলেও জানান তার স্বামী সফি উল্লাহ।
হারুন খোনার বলেন,
প্রতিদিনই গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার বহু নারী তাদের নানা সমস্যা নিয়ে তার বাড়িতে
এসে ভিড় করেন। তাদের নিষেধ করার পরও তারা আসেন তার কাছে। মানুষের অনুরোধ রাখতে গিয়ে
বাধ্য হয়ে ঝাড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করেন তিনি। এ সময় এ প্রতিবেদককে তার ঝাড়ফুঁক কাজের
কক্ষে নিয়ে বেশ কয়েকটি কাচের ছোট বোতল দেখিয়ে দম্ভ করে বলেন, ‘মানুষের উপকার করার জন্য
কয়েকটি বদ জিন সিলেট থেকে ধরে এনে এসব বোতলে ভরে রেখেছি।’ কী কী চিকিৎসা দিচ্ছেন- এমন
প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘নানান জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিই। বিশেষ করে ক্যানসারসহ বড় বড়
রোগের চিকিৎসা দিচ্ছি। মানুষ আমার ঝাড়ফুঁকে উপকার পায় বলেই প্রতিদিন এসে ভিড় করে।’ এ সময় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ
না করতে অনুরোধ করেন হারুন।
কমলনগর উপজেলা
স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী জানান, স্বাস্থ্য সচেতনতার
অভাবে মানুষ তাদের কাছে যায়। তার বিষয়ে এর আগে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেবেন জানিয়ে এসব বিষয়ে মানুষকে আরও সচেতন হতে পরামর্শ দেন তিনি। কমলনগর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা (ইউএনও) সূচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ভুক্তভোগী কেউ তার কাছে অভিযোগ করলে অবশই
ব্যবস্থা নেবেন। বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবেন বলেও তিনি জানান।