ইসমাইল হোসেন লিটন, শরণখোলা (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৩ পিএম
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৯ পিএম
প্রবা ফটো
সুন্দরবনে ঘূণির্ঝড় জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্য প্রাণীদের সুরক্ষায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১২ মাটির টিলা। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনে বাঘের আধিক্য থাকা পূর্ব বিভাগের কটকা, কচিখালী, কোকিলমুনি, সুপতি, টিয়ারচর, দুধমুখী ও পশ্চিম বিভাগের মান্দারাড়িয়া, নোটাবেকী, পুষ্পাকাটি, নীলকমল, পাটকোস্টা ও ভোমরখালীতে এসব টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব টিলার পাশেই খনন করা হচ্ছে সুপেয় মিঠাপানির ১২টি পুকুরও। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব টিলা-পুকুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে বাঘ হরিণসহ বন্য প্রাণী।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আবু নাসের মোহসিন হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ছে সুন্দরবন। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্য প্রাণীদের সুরক্ষা জরুরি। এই অবস্থায় সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ১২টি উঁচু মাটির টিলা নির্মাণ করা হচ্ছে। সুন্দরবনের শরণখোলা, চাঁদপাই, খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের আধিক্য থাকা ১২টি স্থানে মাটির টিলা নির্মাণের পাশাপাশি খনন করা হচ্ছে সুপেয় মিঠাপানির পুকুরও। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব টিলা-পুকুরের নির্মাণকাজ শেষ হবে।
আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘বাঘ সব সময় উঁচু স্থান পছন্দ করে। বিশেষ করে প্রজননের সময়ে বাঘ দম্পতির শুষ্ক ও উঁচু স্থানের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া মা বাঘ কখনও শাবকের কাছ থেকে দূরে যেতে চায় না। টিলা নির্মিত হলে বাঘের প্রজননের সুবিধা বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে প্রজনন স্থানের পাশেই তাদের সুপেয় মিঠাপানি পান করতে পারবে।’
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ ও শিকার করা প্রাণীর জরিপের কাজ চলছে জানিয়ে আবু নাসের মোহসিন বলেন, ‘এরই মধ্যেই সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, শিকার করা প্রাণী ও খাল জরিপকাজ শেষ হয়েছে। শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ চলছে। আগামী জুলাই মাসে বাঘ ও শিকার করা প্রাণীর জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’
প্রকল্পের আওতায় টিলা-পুকুর খননের পাশাপাশি বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বন থেকে লোকালয়ে যাতে বন্য প্রাণী যেতে না পারে সেজন্য পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেড়া, দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো, জিপিএস স্থাপন, খাল জরিপ, বাঘ অজ্ঞানের জন্য ট্রাংকুলাইজিং গান ও ক্যামেরা কেনা হবে। এ ছাড়াও এই প্রকল্পে বাঘসহ বন্য প্রাণী সুরক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) ও কমিউনিটি টহল দল (সিপিজি) সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক কেনা ও প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম রয়েছে বলেও জানান আবু নাসের মোহসিন।
সুন্দরবনে বাঘ বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতিতে বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ১০৬টি। ২০১৮ সালে একই পদ্ধতির জরিপে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টিতে। ২০১৫ ও ২০১৮ সালের পৃথক জরিপে সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধি পায় ৮ শতাংশ হারে। এবার আশার কথা হচ্ছে এবার জরিপের সুন্দরবনের গহিনে স্থাপন করা ক্যামেরাগুলোর ৫৫ শতাংশে বাঘের ছবি পাওয়া গেছে।