× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ

দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন ফেরি

মেহেদী হাসান রনি, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০২ এএম

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:২৯ পিএম

গত বুধবার ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিটির ফিটনেস ছিল না বলে অভিযোগ। প্রবা ফটো

গত বুধবার ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা। ফেরিটির ফিটনেস ছিল না বলে অভিযোগ। প্রবা ফটো

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথের মধ্যে চলাচলকারী অধিকাংশ ফেরির ফিটনেস নেই। আবার কুয়াশার মধ্যে ফেরি চলাচলের জন্য পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে যেসব ফগলাইট বসানো হয়েছে, সেগুলোও বিকল হয়ে পড়ে আছে। এসব কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত বুধবার সকালে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরিটিরও ফিটনেস ছিল না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ‘আমানত শাহ’ নামের একটি ফেরি ১৭টি যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটের কাছে ডুবে যায়। 

দুর্ঘটনাকবলিত রজনীগন্ধা ফেরির আরোহী ছিলেন ট্রাকচালক আশিক। তিনি বলেন, ফেরিটির কোনো নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লাগেনি। তলা দিয়ে পানি ঢুকে কাত হয়ে ৯টি ট্রাক নিয়ে ফেরিটি ডুবে যায়। 

ঘাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ নৌপথের অধিকাংশ ফেরির বয়স ৩৫ বছরের বেশি। রজনীগন্ধার বয়স ছিল ৪৭ বছরের বেশি। রো রো ফেরি ‘খান জাহান আলী’ তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে। আরেক রো রো ফেরি ‘কেরামত আলী’ ৩৬ বছরের পুরোনো। ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’ ফেরি তৈরি হয় ১৯৯২ সালে। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ফেরিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফগলাইট বসানো হয়। একেকটি ৭ হাজার কিলোওয়াটের লাইট কিনতে ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়। বলা হয়েছিল, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। অথচ কয়েক দিন পরই অধিকাংশ লাইট নষ্ট হয়ে যায়। খান জাহান আলী, শাহ আলী, কেরামত আলী, ভাষা শহীদ বরকত, কপোতি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, শাহ আমানত ও শাহ পরান ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চলাইট বসানো হয়।

কয়েকজন ফেরিচালক জানান, প্রতিটি ফেরির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। নাব্য সংকটের কারণে ধীরে ধীরে চললেও কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ রাখতে হয়। ফগলাইট লাগানো হলেও তা কাজে আসেনি। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১৬টি ফেরি চলাচল করে। এসব ফেরিতে ১৭ থেকে ১৮ শ যানবাহন পারাপার হয়। কিন্তু কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই ৩ থেকে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ফেরির এক সিনিয়র মাস্টার বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যেসব ফেরি চলাচল করছে তা প্রায় সময় বিকল হওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এমন ঘটনা রয়েছে, মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে মাঝ নদীতে ফেরি আটকা পড়ে। 

দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় বসবাসকারী আবেদ আলী (৭৮) বলেন, এই ঘাটে প্রায় ৪০ বছর আছি। প্রথম থেকে যেসব ফেরি দেখেছি, আজ পর্যন্ত সেসব ফেরি মেরামত করে চালানো হচ্ছে। 

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা সেক্টরের উপ-মহাব্যবস্থাপক খালেদ নেওয়াজ বলেন, এ নৌপথে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো ফেরি নেই। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পাঁচ বছরে একবার ফেরির ডকিং করতে হয়। রজনীগন্ধা ২০২১ সালে ডকিং হয়। আর ফগলাইটের বিষয়ে মন্ত্রী কথা বলেছেন, আমি কিছু বলব না। আর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর ফেরিডুবির কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।’

বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান ড. এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, ‘ফেরির ফিটনেস ও দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হবে।’

৫০ ফুট পানির নিচে রজনীগন্ধা, চলছে উদ্ধার কাজ

ডুবে যাওয়া ফেরি রজনীগন্ধা শনাক্ত করেছে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ডুবুরি দল। ফেরিটি প্রায় ৫০ ফুট পানির নিচে রয়েছে। সেটিকে তোলার চেষ্টা করছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। সেটিকে তোলার জন্য রশি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও ছয়টি পণ্যবাহী ট্রাক ও ফেরির সহকারী ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ূন কবীরকে উদ্ধার করা যায়নি। 

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অফিসের ডিজিএম শাহ খালেদ নেওয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের সক্ষমতা নেই হামজা ও রুস্তমের। গত শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে প্রত্যয়। ডুবুরি দল নদীতে ডুবে থাকা ফেরিটি শনাক্ত করেছে। আমরা দ্রুত ফেরি ও ট্রাকগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

গত বুধবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট থেকে ২০০ মিটার দূরে পদ্মা নদীতে ৯টি ট্রাক নিয়ে ডুবে যায় ঘন কুয়াশায় নোঙর করে রাখা ফেরি রজনীগন্ধা। এ ঘটনায় ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। হুমায়ূন কবীর নামে ফেরিটির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। হুমায়ূন কবিরের বাড়ি পিরোজপুরে। তিনি বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আরিচা আঞ্চলিক কমিটির দক্ষিণ (পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া) শাখার সভাপতি। এখন পর্যন্ত বিআইডব্লিউটির উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম একটি কাভার্ডভ্যান ও দুটি পণ্যবাহী ট্রাক উদ্ধার করেছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা