× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ নারায়ণগঞ্জে

এম আর কামাল ও সাইফুল ইসলাম সায়েম, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৭ পিএম

গ্যাসের অভাবে উৎপাদন বন্ধ নারায়ণগঞ্জে

গ্যাসের অভাব চরম আকার ধারণ করেছে নারায়ণগঞ্জে। কয়েক মাস ধরে জেলার শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে শীতের শুরু থেকেই গ্যাস একেবারে নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থা চলমান থাকলে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলেও তারা জানান। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলির সব এলাকাতেই বাসাবাড়িতে তীব্র গ্যাসসংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গৃহিণীরা।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাইং কারখানা, স্পিনিং মিল, পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের ছয় শতাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। চলমান গ্যাসসংকটের কারণে চলতি অর্থ-বছরে রপ্তানি অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা চিন্তা করছি গ্যাস যেহেতু নাই, তাই ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণা করব কি না। সারা দিন বসে থাকতে হয়, কোনো কাজ নাই। শ্রমিকরা এসে বসে থাকে। তবু তাদের তো বেতন দিতে হয়।

গ্যাস সংকটের কারণ হিসেবে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জোনের সব গ্যাসটা সার কারখানায় বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য জোনে কিছু গ্যাস পাওয়া যায়, কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জোনে পুরোটাই বন্ধ। তিতাস ও পেট্রোবাংলাকে আমরা বহুবার বলেছি। চিঠি দিয়েছি। নিজেরা গিয়ে কথা বলেছি।

কয়েক মাস ধরে গ্যাসসংকটে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দারা। বিশেষ করে শীতের শুরু থেকেই রান্না করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন নারীরা। আগে দিনের বেলায় গ্যাস না থাকলেও রাতে তিন-চার ঘণ্টা থাক। এখন রাতেও গ্যাস থাকে না। হাকিমবাগ এলাকার গৃহিণী সাথী আক্তার বলেন, গ্যাস না থাকায় ইলেকট্রিক কুকারে রান্না করতে হয়। এতে বিদ্যুৎ বিল আগের চেয়ে অনেক বেশি আসে। 

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের শিল্প-কারখানা ও বাসাবাড়িতে প্রতি মাসে গ্যাসের চাহিদা ৯০-৯৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ একেবারে কম। পাশাপাশি এলএনজি মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে দাবি করে তারা। তিতাস নারায়ণগঞ্জের ডিজিএম প্রকৌশলী মামুন আর রশীদ বলেন, ‘উৎপাদন কমে গেছে। এলএনজিও আমরা পাচ্ছি না। এই সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘গ্যাস বিদ্যুতে লাগবে, সারে লাগবে, ইন্ডাস্ট্রিতে লাগবে। সব জায়গায় লাগবে। গ্যাস দিয়েই তো সব হয়। কিন্তু গ্যাস নেই।’ তবে ব্যবসায়ীদের আশার বাণী শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। ম্যানেজমেন্ট যদি সিদ্ধান্ত নেয়, নারায়ণগঞ্জ সপ্তাহে তিন দিন চলবে, জয়দেবপুরে তিন দিন—এভাবে যদি লোড শেয়ার করা হয় তাহলে একটি সমাধান আসতে পারে।’ এ ধরনের লোড শেয়ারিং পরিকল্পনা করা হতে পারে বলে জানান তিনি। 

এদিকে গ্যাসসংকটের আন্দোলনে নামছে সামাজিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটিসহ একাধিক সংগঠন। গ্যাসসংকটের সমাধান দাবিতে আগামীকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচির ডাক দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি। এদিন গ্যাসের দাবিতে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। এর আগেও একাধিকবার তিতাস গ্যাস কার্যালয়ের সামনে ঝাড়ু মিছিল, ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কিন্তু সমাধান আসে সাময়িক সময়ের জন্য। স্থায়ী সমাধানের বদলে দফায় দফায় বাড়ে গ্যাসের দাম, যা নিয়ে বরাবরই ক্ষুব্ধ ভোক্তা মহল।

ফতুল্লার বিসিক শিল্প নগরীর রফতানিমুখী কয়েকটি ডাইং কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশি বায়ারদের অর্ডার পূরণ করতে উৎপাদনের চাপে শ্রমিকরা যেখানে দম ফেলার সময় পেতেন না, গ্যাসের অভাবে মেশিন বন্ধ থাকায় এখন তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। গুদামে পড়ে রয়েফে কোটি কোটি টাকার কাপড়। নারায়ণগঞ্জে গ্যাসনির্ভর অধিকাংশ শিল্পকারখানায় একই অবস্থা। যে কারখানায় প্রতিদিন ২০-৩০ মেট্রিকটন পণ্য উৎপাদন হতো, এখন সেখানে এক টনও হচ্ছে না। কবে গ্যাস আসবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় শ্রমিক-কর্মচারীরা।

ক্রোনি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অবন্তি কালার কারখানা দেখতে গেলে এর ব্যবস্থাপক আহসান হাবীব বলেন, তাদের দুটি ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত আছেন ১২ হাজার শ্রমিক। গ্যাসের প্রেশার মিনিমাম পাঁচ পিএসআই হলে প্রোডাকশন স্বাভাবিকভাবে চলে। কিন্তু গত দুই মাস ধরে তারা পাচ্ছেন এক-দুই পিএসআই। এর মধ্যে গত এক মাস ধরে গ্যাসের প্রেসার শূন্য পিএসআইয়ে নেমে এসেছে। ফলে দিনে-রাতে কোনোভাবেই মেশিন চলছে না। সব সেক্টরে প্রোডাকশন বন্ধ রয়েছে। আমাদের পুরো উৎপাদনকাজই বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

জেলা কলকারখানা অধিদফতর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে গ্যাসনির্ভর ছয় শতাধিক শিল্প কারখানার মধ্যে চার শতাধিক ডাইং কারখানা, অর্ধশতাধিক রি-রোলিং ও স্টিল মিল, ৩৫টি চুন কারখানা, ৮টি সিমেন্ট কারখানা এবং ১০টি অটো সল্ট মিল রয়েছে। সব জায়গায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সব জায়গায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা