ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৮ পিএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৭ পিএম
টংঘরের মতো ছোট ছিমছাম একটি দোকান। ওপরে টিনের চাল ও ফলস সিলিং। তিন দিক খোলামেলা। তিন পাশে বসার জন্য লম্বা তিনটি কাঠের বেঞ্চ। ভেতরেও রয়েছে বসার ব্যবস্থা। এই দোকানই প্রতিদিন বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শত শত মানুষের আনাগোনায় মুখর থাকে। তাই বেঞ্চ খালি পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর। এই দোকানের নাম সুজন টি স্টল। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শমসেরনগর বাজারের এই দোকানে আছে হরেক রকমের চা। রঙ চা, দুধ চা, গ্রিন টি, কফি, নরমাল চা, হরলিক্স চা, কফি চা, মরিচ চা, লেবু চা, আদা চা ইত্যাদি। তবে বেশিরভাগ মানুষ আসে সুজনের তৈরি মালাই চায়ে চুমুক দিতে।
সুজন বলেন, পরিবারের আর্থিক দৈন্য ঘোচাতে বছর তিনেক আগে শুরু করেন চায়ের ব্যবসা। অল্প দিনেই তার মালাই চায়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে জেলার সর্বত্র। এখন মানুষকে নেশার মতো টানে সুজন টি স্টল। সম্প্রতি সুজন টি স্টলে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মালাই চা খেতে ভিড় জমিয়েছে মানুষ। এর মধ্যে ভ্রমণে আসা চট্টগ্রামের তিনজন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুইজন পর্যটকও ছিলেন। চা তৈরির ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় সুজন মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানালেন, গড়ে প্রতি দিন ৫০০ কাপ মালাই চা বিক্রি হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্পেশাল মালাই, চকলেট মালাই, হরলিক্স মালাই, কফি মালাই, রেগুলার মালাই। দামেও রয়েছে ভিন্নতা। স্পেশাল মালাই ৭০ টাকা, চকলেট মালাই ৫০ টাকা, হরলিক্স মালাই ৪০ টাকা, কফি মালাই ৪০ টাকা, রেগুলার মালাই ৩০ টাকা। সুজন মিয়া বলেন, ‘খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে মালাই চা তৈরি করতে হয়। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ লিটার গরুর দুধ কিনতে হয় মালাই চা তৈরিতে। প্রথম দিকে দোকানের খুব একটা কদর না থাকায় চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনাও নিই। তবে আস্তে আস্তে দোকানের ক্রেতা বাড়তে থাকে। ফলে বিদেশের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি। এখন তো অনেক সময় ক্রেতাদের চাপে অস্থির হয়ে পড়ি। জায়গাও দিতে পারি না অনেককে। সব ধরনের চা আমার দোকানে থাকলেও মালাই চায়ের ক্রেতা ৯৫ ভাগ। আর বাকি ৫ ভাগ অন্য চায়ের ক্রেতা। এখন আমার চায়ের দোকানের ইনকাম দিয়েই পুরো পরিবার চলে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর এলাকার শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্টের মালিক তানভীরুল আরেফিন লিংকন বলেন, ‘আমার রিসোর্টে যারা পর্যটক হিসেবে আসেন তাদের আমি সুজন টি স্টলে নিয়ে এসে মালাই চা পান করাই।’ মৌলভীবাজারের ইকো ট্যুর গাইড শ্যামল দেববর্মা বলেন, ‘সুজন টি স্টলের মালাই চায়ের সুনাম এখন জেলা ছাড়িয়ে জেলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি হামহাম জলপ্রপাতে আসা কুমিল্লার ১২ জন ভ্রমণপিপাসু আমার কাছে সুজন টি স্টলের মালাই চায়ের কথা জানতে চেয়েছিল।’
সুজনের মালাই চা তৈরিতে লাগে লবঙ্গ, গোলমরিচ, সবুজ এলাচ, দারচিনি, আদা গুঁড়া, জায়ফল, দুধ, পানি, চিনি। প্রথমেই পিষে নিতে হয় লবঙ্গ, গোলমরিচ, সবুজ এলাচ এবং দারচিনি। এবার ওই গুঁড়ার সঙ্গে আদা গুঁড়া ও জায়ফল গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর দুধ এবং পানি গরম করে দুধে আদা এবং চা-পাতা দিতে হয়। চায়ের মিশ্রণ চুলায় ৪-৫ মিনিট জ্বাল দিয়ে অল্প তাপে ৪-৫ মিনিট রাখতে হয়। চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে পান করা যায়।