নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৭ এএম
ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দেন সাধারণ লোকজন। প্রবা ফটো
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাত নামতেই শুরু হয় ডাকাতের আতঙ্ক। আর এই ডাকাত আতঙ্কে ঘুম নেই এলাকার মানুষের চোখে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এরপরও ডাকাতদের ঠেকাতে পারছেন না। প্রায় প্রতিরাতেই ডাকাতরা সুযোগ বুঝে হানা দিচ্ছে। শীত এলেই ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এবারের ডাকাতির ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে বলে দাবি উপজেলাবাসীর। এদিকে ডাকাতির ঘটনা থামাতে পারছে না পুলিশও। থানার আশপাশের এলাকায় শুরু হয়েছে ডাকাতি। এতে জনমনে চরম ক্ষোভের পাশাপাশি আতঙ্ক বাড়ছে। তবে থানা পুলিশ জানিয়েছে, এলাকাবাসীর নিরাপত্তায় টহল বাড়ানো হয়েছে।
আড়াইহাজার থানার পাশের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুল মতিন। তিনি বলেন, ‘থানার পাশেই ডাকাতরা বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিচ্ছে। থানার আশপাশের বাসিন্দারা যেখানে রাতে নিরাপত্তা পাচ্ছে না, সেখানে দূরের এলাকাগুলোর কী অবস্থা।
সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে থানার অদূরে দিঘিরপাড়া এলাকায় পৌরসভা বাজারের এক ফল ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। টের পেয়ে এলাকাবাসী ডাকাতদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।’ স্থানীয় যুবক রুহুল আমিন নেভী বলেন, ‘পুলিশকে কয়েকবার মোবাইল করা হলেও ঘটনাস্থলে আসেনি। ফোন দিলে তারা (পুলিশ) উল্টো বলে, ‘আপনারা ডাকাত ধরেছেন। ধরলে পুলিশ আসবে।’
গত ৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে থানার অদূরে এক সাবেক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। কিছু না পেয়ে পরিবারের লোকজনকে কুপিয়ে আহত করে। ৩ জানুয়ারি দিবাগত রাতে থানার কাছে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান টিপুর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল প্রায় ৪২ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। তিনি জানান, রাত ২টার দিকে গেটের তালা কেটে দ্বিতীয় তলায় একদল ডাকাত প্রবেশ করে। পরে তারা চারটি কক্ষে পরিবারের ঘুমন্ত সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ লুটে নেয়।
টিপুর বড় ভাই ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৩৮ বছর ধরে এই বাড়িতে বসবাস করছি। থানার অদূরেই বাড়িটির অবস্থান হওয়ায় নিরাপত্তাবোধ করতাম। কিন্তু এবার ডাকাতির ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’
গত বছরের ১০ নভেম্বর স্থানীয় গোপালদী পৌরসভা এলাকার লক্ষ্মীবরদীর কাপড় ব্যবসায়ী কাজী রাফসান জানির বাড়িতে ডাকাতরা হানা দিয়ে প্রায় ২৪ লাখ টাকার মালমাল লুট করে। ১৩ নভেম্বর ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের বৈলারকান্দী এলাকায় কাপড় ব্যবসায়ী শামীমের বাড়িতে ডাকাতরা ১২ ভরি স্বর্ণালংকার, ১ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে।
১৫ নভেম্বর উপজেলা সদরের ‘আশা’ নামে একটি এনজিওর অফিসসহ পাশের দুটি ফ্ল্যাটে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ প্রায় ৯ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। একই ভবনের আবুল কালাম ভূঁইয়ার ফ্ল্যাটে ডাকাতরা ২ লাখ টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও স্কুলশিক্ষক আশরাফ আলীর ফ্ল্যাটে ঢুকে ২০ হাজার টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। একই সময়ে স্থানীয় একটি মহিলা মাদ্রাসায় হানা দেয়। সেখান থেকেও স্বর্ণালংকার লুট করে। পরে মাদ্রাসায় প্রবেশের বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষিকার কাছে মালামাল ফিরিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের গ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি বেড়েছে। ডাকাতরা মুখোশ পরে ডাকাতি করে। মনে হচ্ছে ডাকাতির সঙ্গে এলাকার বখাটে যুবকরা জড়িত। তা না হলে ঘরে কী আছে, তারা জানে কী করে?’
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লাক মিয়া বলেন, ‘শীত এলেই ডাকাতি বেড়ে যায়। এই উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় ডাকাতি হচ্ছে। প্রতিটি গ্রামের মানুষ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। তবে থানা পুলিশ তৎপর থাকলে ডাকাতি রোধ করা সম্ভব।’
জানতে চাইলে আড়াইহাজার থানার ওসি আহসান উল্লাহ বলেন, ‘এলাকাবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। ডাকাত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে আবারও ডাকাতি করছে। এরপরও এলাকাবাসীকে নিরাপত্তা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।