× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘দাফনের’ ৬ মাস পর বাড়ি ফিরলেন তরুণী

মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:২৯ পিএম

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩০ পিএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের চৌকার গ্রামে দাফনের ৬ মাস পরে জীবিত ফিরে আসা ববি খাতুন। প্রবা ফটো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের চৌকার গ্রামে দাফনের ৬ মাস পরে জীবিত ফিরে আসা ববি খাতুন। প্রবা ফটো

মরদেহ পাওয়া গেছে। শনাক্তের পর দাফনও করা হয়েছে। মৃত নারীকে হত্যার দায়ে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি জেলহাজতও খেটেছেন ৪০ দিন। এরই মধ্যে ছয় মাস পর গত বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এসেছেন ২৭ বছর বয়সি সেই তরুণী। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের চৌকার গ্রামের এই তরুণী ববি খাতুনের সঙ্গে আরও এসেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার মাজেদ আলী। ববি খাতুন জানিয়েছেন, মাজেদ আলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। ‘মৃত ব্যক্তি’ ফিরে আসার ঘটনায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে শিবগঞ্জজুড়ে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বস্তাবন্দি মরদেহটি তাহলে কার ছিল।

প্রসঙ্গত ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের লিলিখিলি মোড়ের একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত এই নারীর গায়ে থাকা স্বর্ণালংকার দেখে ববির পরিবার তাকে ‘ববি’ হিসেবে চিহ্নিত করে। পুলিশের উপস্থিতিতে জেলা শহরের ফকিরপাড়া গোরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ক্যাপড়াটোলার এনামুল হকের ছেলে রুবেল আলীকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ৪০ দিন পর জেলহাজত থেকে জামিনে মুক্ত হন রুবেল। তবে মামলাটি এখনও চলমান।

এ মামলায় পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ফাহিম ও বিপ্লব নামে আরও দুইজনকে আটক করেছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। জরজেস আলী নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এলাকাবাসী জানে, ববি খাতুন মারা গেছে। এ ঘটনায় একজন জেলও খেটেছে। হঠাৎ করেই দেখি, ববি খাতুন ও তার স্বামী গ্রামে এসেছেন। ‘মৃত’ ববি খাতুনকে দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেছে।” স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাজল আহমেদ বলেন, ববির পরিবার এত দিন দাবি করেছে, ববি মারা গেছে। তাকে জীবিত দেখার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

যা বলছেন রুবেল ও তার পরিবার

‘ববি হত্যা’ মামলার আসামি রুবেলের পরিবারের সদস্যরা জানান, টাকা নিয়ে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে রুবেল ঝগড়াবিবাদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রুবেল ওই যুবকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। ফোনটি উদ্ধার করতে ববি খাতুন রুবেলের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে কথা বলেন। রুবেল ববিকে কেড়ে নেওয়া ফোন ফেরত দিয়ে আসেন। সেদিন রাতেই নিখোঁজ হন সেই তরুণী। কয়েক দিন পর ববির মোবাইল ফোনের কললিস্টের ভিত্তিতে রুবেলকে আটক করে পুলিশ। টানা তিন দিন থানায় আটকে রাখার পর তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

রুবেলের বাবা এনামুল হকের ভাষ্যমতে, ফাহিম নামের এক ছেলে তার ছেলে রুবেলের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার করেছিলেন। ফাহিম এ সময় তার মোবাইল ফোন রেখে যান। এই ফোন ফেরত নিতে ববি খাতুন তার ছেলে রুবেলের মোবাইল ফোনে কল দেন। ববি ওই সময় দাবি করেন যে রেখে যাওয়া মোবাইল ফোনটি তার স্বামীর। রুবেল মোবাইল ফোন ফেরত দিয়ে আসেন। কাকতালীয়ভাবে সেদিনই ববি নিখোঁজ হন।

তিনি বলেন, ফোন ফেরত দেওয়ার দিনই ববি নিখোঁজ হওয়ায় তার পরিবার দাবি করতে থাকে, রুবেল ওই তরুণীকে গুম করেছেন। এরই মধ্যে কয়েক দিন পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে এক নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ পাওয়া যায়। তখন সন্দেহের আঙুল ওঠে রুবেলের দিকে। পরে সদর থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। 

ভুক্তভোগী রুবেল বলেন, ‘আমি ববিকে মোবাইল ফোনটি দিয়ে আসি। অথচ ববি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হলে আমার ওপর চাপ আসতে থাকে। তিন দিন পর জানতে পারি, পুলিশ সদর উপজেলার একটি পুকুর থেকে বস্তাবন্দি অজ্ঞাতপরিচয়ের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। এরপর পুলিশ এসে আমাকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। থানায় তিন দিন আটকে রেখে আমাকে অনেক নির্যাতন করে। এতে আমার শরীরের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরে আমাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এখন আমি জামিনে মুক্ত আছি। কিন্তু মামলা এখনও চলছে।’

রুবের বলেন, ‘নিরপরাধ হয়েও আমাকে এত দিন জেলহাজতে থাকতে হয়েছে। আমার পরিবারকে অনেক খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। তাদের অনেক টাকাপয়সা অযথাই খরচ হয়েছে। সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়েছে। এরই মধ্যে কাল (বুধবার) হঠাৎ শুনতে পাই, ববি বাড়ি ফিরে এসেছে। এতে অনেক স্বস্তি পেয়েছি। আমি যে নিরপরাধ, সেটা এখন স্পষ্ট।’

যা বলছেন ববি খাতুন 

এদিকে ববি খাতুন দাবি করেছেন, রুবেল আলী ও তার সহযোগীরা তাকে বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে মনাকষা এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। তারপর গোমস্তাপুর উপজেলায় নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালান। পরে তারা ববি খাতুনকে নওগাঁ জেলায় ফেলে পালিয়ে যান। অচেতন অবস্থায় তাকে এলাকাবাসী উদ্ধার করেছে। এ সময় পরিচয় হয় এক যুবকের সঙ্গে। একপর্যায়ে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা এত দিন ঢাকায় ছিলেন।

কেন বাড়িতে যোগাযোগ করেননি? এ প্রশ্ন করা হলে ববি খাতুন কোনো উত্তর দেননি। 

ববি খাতুনের বাড়িতে ফিরে আসার তথ্য নিশ্চিত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মিন্টু রহমান বলেন, পুলিশ বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করলে ববি খাতুনের পরিবার সেটিকে ববির বলে শনাক্ত করে। তারপর পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে দুইজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রুবেল নামে আরও এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন জামিনে আছেন। 

ঘটনার সময় এই থানায় কর্মরত ছিলেন না, এ কথা জানিয়ে ওসি বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছিল, সেটি এখনও তদন্তাধীন। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা