চলন্ত ট্রেনে স্কুলছাত্রীকে ‘ধর্ষণ’
লালমনিরহাট প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১৯ পিএম
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৫ এএম
লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের কেবিনে ‘ধর্ষণের শিকার’ ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল লালমনিরহাট সদর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পরীক্ষা শেষে তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির বাবা বলছেন, তার কিশোরী মেয়ের মনে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা কখনও সারাবার নয়। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তির দৃষ্টিন্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন তিনি। পুলিশের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে রেলবিভাগ। তদন্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিভাগীয় মামলা করা হবে বলেও জানান লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার।
চলন্ত লালমনি এক্সপ্রেসে বুধবার সকালে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে জানান লালমনিরহাট রেলওয়ে থানার (জিআরপি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলী। তিনি জানান, ভুল করে মেয়েটি লালমনি এক্সপ্রেস টেনে উঠেছিল। নির্যাতনের ঘটনায় ট্রেনটির অ্যাটেনডেন্ট আক্কাছ গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এএসআই রুহুল আমিনের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার আসামি আক্কাছ বরিশাল সদরের শায়েস্তাবাদ সড়কের বাসিন্দা। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত বুধবারই বরখাস্ত করা হয়েছে লালমনি ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোর সেলুন বেয়ারার দায়িত্ব থেকে।
‘ধর্ষণের শিকার’ কিশোরীর (১৩) বাড়ি ময়মনসিংহের এক উপজেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরীর মা গাজীপুরে থেকে মেসে কাজ করেন। মেয়ে মাঝে মাঝেই মায়ের কাছে আসত এবং কয়েকদিন থেকে আবার গ্রামের বাড়ি ফিরে যেত।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে কিশোরী জয়দেবপুরে স্টেশনে আসে ময়মনসিংহে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার ট্রেনের বিলম্ব ঘটে। পরে রাত সোয়া ১২টার দিকে না বুঝেই ভুল করে সে লালমনি এক্সপ্রেসে উঠে পড়ে। রাত আড়াইটার দিকে অ্যাটেনডেন্ট আক্কাস গাজী কিশোরীর কাছে টিকেট চেকিংয়ের জন্য যান। টিকেট না পেয়ে তাকে একটি আসনে বসিয়ে দেন অ্যাটেনডেন্ট। পরে সকাল ৮টার দিকে কিশোরীকে আসন থেকে তুলে একটি কেবিনে নিয়ে যান অ্যাটেনডেন্ট। ট্রেনটি লালমনিরহাটের তিস্তা স্টেশনে পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টায়। তখন ওই কেবিন থেকে কান্না ও চিৎকারের শব্দ শুনে পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে যান। এর পর কিশোরীকে উদ্ধার এবং অ্যাটেনডেন্টকে পুলিশ আটক করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
ঘটনাটি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডিআরএম সালামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলী(ডিএমই) তাসরুজ্জামান, বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার মাহফুজ রহমান ভূইয়া ইফতেখার, বিভাগীয় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডেন্ট সফিকুর রহমানসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। সভায় রেলওয়ের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আক্কাস গাজীর বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত (পূর্বই নেওয়া), তদন্ত প্রতিবেদন পরবর্তী বিভাগীয় মামলা ও তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে লালমনিরহাট বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান ও ডিএমই তাসরুজ্জামান, বিভাগীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডেন্ট সফিকুর রহমান, ডিএমও ইফতেখার মাহফুজকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন ডিআরএম আব্দুস সালাম।
এর আগে লালমনিরহাট সদর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা করেন মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. হাসিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তাতির আর কিছু বলতে পারব না।’ শারীরিক পরীক্ষার পর ওই কিশোরীকে পুলিশ পরিবারের জিম্মায় দিয়েছে পুলিশ। কিশোরীর বাবা বলেন, ‘পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ওই রেল কর্মচারীর ফাঁসি দেখে যেতে চাই। কেননা ওই রেল কর্মচারী সারা দেশের মানুষের কাছে রেলবিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন এর সঠিক বিচার করেন।’