কক্সবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০১ পিএম
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৪ পিএম
প্রশাসনের সিলগালা ভেঙে কক্সবাজারের লাইট হাউজ এলাকায় এভাবে কাটা হচ্ছে পাহাড়। প্রবা ফটো
কক্সবাজার সদর উপজেলায় প্রশাসনের অভিযানে জব্দ করা পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত এস্কেভেটর লুটের ঘটনায় অবশেষে মামলা করা হয়েছে। যে এস্কেভেটরটি গত ১৫ জানুয়ারি জব্দ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুসের জিন্মায় দিয়েছিল প্রশাসন। তার পরদিন ১৬ জানুয়ারি সকালে তাকে মারধর করে লুট করা হয় সেই এস্কেভেটর। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুস বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে মামলাটি করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এজাহারে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি সংশ্লিষ্ট আইনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলীর নুরুল আমিন ও নুরুল আলম ভুট্টো, লিংক রোড়ের নুরুল আমিন মুন্না, লাইট হাউজ এলাকার মো. মনির, কলাতলীর মঈনুল হোসেন, মোহাম্মদ শাকিল ও মোহাম্মদ আলম।
মামলার বাদী মোহাম্মদ ইউনুস জানান, গত ১৫ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে কলাতলীর বাইপাস এলাকার বিকাশ বিল্ডিং থেকে একটি এস্কেভেটর জব্দ করে তাকে জিম্মায় দেয়। পরের দিন সকালে তাকে মারধর এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে প্রশাসনের জব্দ করে জিম্মায় দেওয়া এস্কেভেটর ছিনিয়ে নিয়ে যায় একদল অস্ত্রধারী। তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে সহযোগিতা চান তিনি। কিন্তু পুলিশ পৌঁছার আগেই তারা এস্কেভেটর নিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার পর তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ছিলেন। পরে ইউএনও-এসি ল্যান্ডকে অবহিত মামলাটি করেন।
এদিকে গত ১৫ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে লাইট হাউজ এলাকায় সিলগালা করে দেওয়ার পর তা ভেঙে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা পল্লব। এলাকাবাসী জানিয়েছে যেখানে এখন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পাহারায় রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা জানিয়েছেন, কোনোভাবে পাহাড় কাটতে দেওয়া হবে না। একবার অভিযানের পর তা অমান্য করে আবারও পাহাড় কাটার খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে মামলা হচ্ছে। আবারও অভিযান হবে।
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। তিনি দ্রুত পাহাড় কাটা বন্ধে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘রাত নামলেই পাহাড় কাটার ধুম’ শিরোনামে স্বচিত্র একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। একই সংবাদ প্রকাশ করেছে কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকও।
প্রকাশিত সংবাদ নজরে আসার পর রবিবার ১৪ জানুয়ারি পরিবেশ আদালত কক্সবাজারের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ সংবাদটি আমলে নিয়ে মিস মামলা করেন।
মামলার আদেশে আদালত উল্লেখ করেন, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(গ) মতে ঘটনা স্বপ্রণোদিত হয়ে আমলে নেওয়ার এখতিয়ার রাখেন। এই বিষয়ে সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন কর্মকর্তা কর্তৃক ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক ঘটনা সংঘটন সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়ে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা আগামী ২১ জানুয়ারি স্বশরীরে হাজির হয়ে স্থিরচিত্র সহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার পর পরই ১৫ জানুয়ারি অভিযান চালানো হয়। ১৬ জানুয়ারি এস্কেভেটর লুট এবং সিলগালা ভেঙে পাহাড় কাটা শুরু করে চক্রটি। যা প্রকাশিত হয়েছে ১৬ জানুয়ারি ও ১৭ জানুয়ারি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ।