রফিকুল ইসলাম সান, বেড়া (পাবনা)
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:১৭ এএম
বেড়া উপজেলাধীন হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার মোল্লার। প্রবা ফটো
‘বাবার থেকে ১০-১২ শতাংশ জমি পেয়েছিলাম। তেমন বড় কোনো আয়ের মাধ্যম নেই। ১৭ বছর ধরে অটো চালাই। সারা দিন এটা থেকে ৫০০-৬০০ টাকার মতো আসে। আর এই আয় থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করি। সবার কাছে দোয়া চাই যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সততার সঙ্গে চলতে পারি এবং দরিদ্র মানুষের সেবা করতে পারি।’Ñ কথাগুলো পাবনার বেড়া উপজেলাধীন হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার মোল্লার।
তিন সন্তানের জনক জব্বারের বয়স এখন চল্লিশের ঘরে। ১৭ বছর ধরে অটো চালান তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছেন। শুনেছেন তাদের জীবনের দুঃখ-কষ্টের কথা। নিপীড়িত-নির্যাতিতদের পাশের থাকার সংকল্প তাকে তাড়িত করে। আর সেই ভাবনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ইউপি সদস্য হওয়ার।
প্রথম চেষ্টায় সাফল্য ধরা দেয়নি তাকে। ২০১৮ সালে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করে হেরে যান মাত্র ১০০ ভোটের ব্যবধানে। তবে হাল ছেড়ে দেননি। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ইউপি নির্বাচনে জয় পান জব্বার।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের কল্যাণে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে সংসারের খরচ মেটাতে ধরে রেখেছেন আগের পেশাও। এজন্য স্থানীয়রা অনেকে তাকে ভালোবেসে ‘গরিবের মেম্বার’ বলেই ডাকেন। তারা জানান, জব্বার মোল্লা উপজেলার হাটুরিয়া এলাকার বাসিন্দা মৃত হাজী মোহাম্মদ নুর ইসলাম মোল্লার ছেলে। নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই মানুষকে নানা সহযোগিতা করেছেন তিনি। সে কারণেই স্থানীয়দের কাছে জব্বারের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। তিনি দরিদ্র মানুষের সুখ-দুঃখের খবর জানতে অটো চালিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যান। এমন জনপ্রতিনিধি তারা কখনও পাননি।
২ নম্বর ওয়ার্ডের জগনাথপুর এলাকার বাসিন্দা রহিমা খাতুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার স্বামী একজন কৃষি শ্রমিক। ১২ মাস নিয়মিত কাজ থাকে না, সংসার তার উপার্জনেই চলে। সামান্য আয়ে তিন সন্তানের লেখাপড়া ও সংসার খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক কষ্টে ছিলাম। জব্বার মেম্বার আমাদের পরিবারের জন্য একটা ভিজিডির কার্ড করে দিয়েছেন। প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছি। এখন মাসে অন্তত চালের চিন্তা কিছুটা হলেও কমেছে। আর এই কার্ড পেতে কোনো টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয়নি।’
জগনাথপুর এলাকার আরেক বাসিন্দা সাবানি খাতুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার স্বামী নির্মাণশ্রমিক। দুই সন্তানের সংসারে একমাত্র উপার্জন সেই করে। জব্বার মেম্বার আমাদের টিসিবির কার্ড করে দিয়েছে। আমার মা শীতে কষ্ট করছিলেন, মেম্বার মাকে একটা কম্বল দিয়েছে। বিনিময়ে কোনো টাকা-পয়সা লাগে নাই। এমন মেম্বারকেই আমরা ভোট দিতে চাই।’
জব্বার মোল্লার স্ত্রী পারভীন আক্তার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার স্বামীর পড়াশোনা জানা নেই, টাকা-পয়সা নেই। আমরা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। কিন্তু আগে থেকেই যাকে যেভাবে পারত সাহায্য করত। তাই মানুষ ভালোবেসে আমার স্বামীকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। দরিদ্র মানুষের সেবা করতে গিয়ে আয়-রোজগার কম হয়, এতে আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাতে আমাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আমার স্বামী যে মানুষদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মর্যাদা যেন রাখতে পারেন।’
হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জব্বার দীর্ঘদিন অটোরিকশা চালায়। সে মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পরেও অটো চালাচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বরাদ্দ অনুযায়ী ২ নম্বর ওয়ার্ডে যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তা সঠিকভাবে বিতরণ করছে জব্বার। তার কার্যক্রমে ওই ওয়ার্ডের মানুষ সন্তুষ্ট। যদিও যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তাতে ওই ওয়ার্ডের সবাইকে দেওয়া সম্ভব নয়, তারপরেও আমি বলে দিয়েছি একবার করে দরিদ্র সবাইকে দিতে। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখেছি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেওয়ার পরে সঠিকভাবে তা বিতরণ করছে জব্বার।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোরশেদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আসলে সমাজের বিত্তবানরাই জনপ্রতিনিধি হয়ে থাকেন, কিন্তু একজন অটোচালক হয়ে জব্বার মোল্লা সমাজের দরিদ্র মানুষের সেবা করছেনÑ বিষয়টা শুনে ভালো লেগেছে। উপজেলা প্রশাসন সকল ভালো কাজের পাশে থেকে সহযোগিতা করবে।’