ভুবন সেন, খানসামা (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২০ এএম
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩২ পিএম
দিনাজপুরের খানসামা আলোকবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত কারুপণ্য কারখানায় কাজ করছেন কয়েকজন নারীকর্মী। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের খানসামা থেকে পাট আর হোগলা পাতায় তৈরি কারুপণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে একজন উদ্যোক্তার। সেই সঙ্গে এসব কারুপণ্য কারখানায় কাজ করে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার পথে পাঁচ শতাধিক পরিবার। পণ্যের গুণগত মান আরও বাড়িয়ে রপ্তানি বৃদ্ধিসহ দেশীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে ‘রংজুট বিডি কোম্পানি’ নামের ওই কারখানাটি।
খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের বাসুলী কালাম চেয়ারম্যান পাড়ায় আত্রাই নদের তীরে অবস্থিত রংজুট বিডি কোম্পানি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সুই-সুতো দিয়ে পাট ও হোগলাপাতার নিত্যনতুন পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা। অন্যদিকে আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে পণ্য তৈরির কাজও চলছে। প্রশিক্ষিত এই নারীদের মাধ্যমে পাট ও হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি হোগলার বাস্কেট, ফ্লোর রাস্ক, ওয়াল ডেকর, ফ্লোর ম্যাট, পাপোশ, ডোর ম্যাট, দোলনাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানাটিতে ৫০ জন নারী-পুরুষ স্থায়ীভাবে কাজ করেন। এ ছাড়া বাড়ির কাজের পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করেন পাঁচ শতাধিক নারী। তারা তাদের বাড়িতে কাজ করেন। স্থায়ী শ্রমিকরা প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা মূল বেতনের সঙ্গে কাজের ওপর বোনাস পেয়ে থাকেন। এর বাইরে যারা এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা কাজের ভিত্তিতে পারিশ্রমিক পান।
কারখানায় সাহেবানী নামে এক নারী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাড়িতে বসে না থেকে এখানে কাজ করে কিছু টাকা আয় করলে সংসারের জন্য অনেক উপকার। বাড়ি থেকে এখানে যাতায়াতও সহজ।’ রুবিনা বেগম নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘এইখানে প্রায় সাত-আট মাস থেকে কাজ করি। আমার দুই ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে। তাদের খরচ আর সংসারের জন্য আমার উপার্জনের এই টাকা কাজে লাগে।’ শান্তিবালা নামে ৬০ বছর বয়সি এক নারী বলেন, ‘গরিব মানুষ বাহে! পেটের ক্ষিদায় এইখানে কাজ করি। কিছু পয়সা কামাই করি। তাই দিয়্যা তো মোর সংসার চলে।’
প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটিম্যান হিসেবে কর্মরত যুবক আনারুল বলেন, ‘বাড়ির কাছে এই কোম্পানি হওয়ায় এলাকার মানুষের এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে। এতে আমরা অনেক খুশি। ৩২ বছর বয়সি তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী কাইদুজ্জামান আজাদের উদ্যোগে এই কারখানাটি প্রস্তুত করা হয়। তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত কারখানার পণ্য এখন বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করা হয় এসব পণ্য। সেই সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমেও এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।’
উদ্যোক্তা প্রকৌশলী কাইদুজ্জামান আজাদ বলেন, ‘টেক্সটাইল বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। তখনই নজরে আসে এই পণ্য তৈরির কাজ ও বিশ্ববাজারে এর চাহিদা। পরবর্তী সময়ে শহর থেকে গ্রামে ফিরে এসে ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানি থেকে অর্ডার নিয়ে ২০১৬ সালে নিজ গ্রামে এই কারখানা শুরু করি। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে এই কাজের পরিধি ও কর্মসংস্থান।’
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে প্রায় কোটি টাকা স্থায়ীভাবে বিনিয়োগ করেছেন। এখন প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এক্সপোর্ট কোম্পানির মাধ্যমে এই পণ্যগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। গড়ে প্রতি মাসে ২৫-৩০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা, খুলনা ও রংপুরের বিভিন্ন শোরুমে প্রতিনিয়ত পণ্য সরবরাহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা পেলে এই কাজের পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব।