মৌলভীবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:০২ পিএম
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৮ পিএম
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
মাঘের প্রথম সপ্তাহের আগে থেকেই মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে শীতের তীব্র দাপট। বলতে গেলে কয়েকদিনে জনজীবনে নেমে এসেছে ছন্দপতন। বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগ। দেখা নেই রোদের। চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা নেমেছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে, এতে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বিপ্লব চন্দ্র দাশ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এখানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে।’
গত এক সপ্তাহ ধরে চা বাগান, পাহাড়ী এলাকা ও হাওরবেষ্টিত এ উপজেলায় দিন-রাত বইছে হিমেল হাওয়া। জেঁকে বসেছে ঘন কুয়াশা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সূর্য উঁকি দিলেও উত্তাপ ছড়াতে পারছে না। সেই সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। তীব্র ঠান্ডায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এতে নাকাল উপজেলার শ্রমজীবী মানুষ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। উপজেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগ।
এদিকে, শীতজনিত রোগে প্রতিদিন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্কদের নিয়মিত ভর্তি অব্যাহত রয়েছে। গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ভীড় প্রতিদিন বাড়ছে।
মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিনেন্দু ভৌমিক জানান, হাসপাতালে শীতজনিত রোগে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এক সপ্তাহ যাবৎ শীতজনিত রোগে কোনো শিশুর মৃত্যু নেই।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বিপ্লব চন্দ্র দাশ জানান, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছিল। ১৬ জানুয়ারি তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে। আর আজ ১৭ জানুয়ারি তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান আনিছ বলেন, ‘তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আজ বুধবার শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। এবারের শীত মৌসুমে এটিই শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি। ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা কমে আসায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি।’
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ক্রমশ কমে আসায় সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে পৌ এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের গরিব অসহায় মানুষের মাঝে ৫ শতাধিক কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দরিদ্র মানুষের মাঝে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও কম্বলের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলছে।’