নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা
কুষ্টিয়া ও নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:১২ পিএম
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:২৭ পিএম
কুষ্টিয়া-৪ আসনের কুমারখালীতে নৌকায় ভোট দেওয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ জিয়ার হোসেন (৪৫) মারা গেছেন। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহতের ছোট ভাই ইয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জিয়ার হোসেনের আরেক ভাই আলতাফ হোসেন। তারা উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বের কালোয়া গ্রামের মৃত কেঁদো শেখের ছেলে।
এ ঘটনায় এলাকায় আবারও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নৌকার সমর্থকরা ট্রাক প্রতীকের সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ।
মোবাইল ফোনে নিহতের ছোট ভাই ইয়ারুল বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে ১২ জানুয়ারি সকালে সাবেক মেম্বর (ইউপি সদস্য) খালেক ও তার তিন ছেলে রিপন, লিটন, শিপনসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ইয়ারুলের দুই ভাইকে গুলি করে আহত করে। তার মধ্যে জিয়ার মারা গেছেন। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় তিনি কুমারখালী থানায় মামলা করেছেন।
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ায় জিয়ারকে প্রতিপক্ষের লোকজন গুলি করেছিল। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে খালেক মেম্বর ও তার ছেলে রিপন আলীকে ফোন করা হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, বের কালোয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল খালেকের সঙ্গে মৃত কেঁদো শেখের ছেলেদের ১০-১৫ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পদ্মা নদীতে মাছ ধরা, যেকোনো নির্বাচনসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকালে বের কালোয়া মোড়ে দুই পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্রসহ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুই ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে কুমারখালী থানার ওসি গোলাগুলি ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন।
এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার দিন সকালে গোলাগুলির শব্দ শুনেছে তারা। অতীতেও কয়েকবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘শুক্রবার ছররা গুলিতে আহত দুই ভাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দুদিন আগে পরিবারের লোকজন জিয়ারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যায়।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন। হামলার ঘটনায় ১৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নোয়াখালীতে পোলিং এজেন্ট হত্যা মামলায় ৩ আসামি কারাগারে
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট শাহেদুজ্জামান পলাশকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার বিকালে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করলে আমলি আদালত-১-এর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মোসলে উদ্দিন মিজান তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার তিন আসামি হলেন, সোনাইমুড়ীর নাটেশ্বর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মনসুর আলী বেপারি বাড়ির আহসান উল্যাহ ওরফে কল্লা হাসান (৩৮), একই ওয়ার্ডের আকবর হোসেন সোহেল (৩৬) ও পূর্ব মির্জানগর গ্রামের মারিজ (২১)।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার রাত ১০টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মির্জানগর গ্রামে শাহেদুজ্জামান পলাশকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পলাশ নাটেশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব মির্জানগর গ্রামের মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে। সংসদ নির্বাচনে তিনি পূর্ব মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাঁচি প্রতীকের পোলিং এজেন্ট ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।