ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০০ পিএম
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:০২ পিএম
বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর পাড়ের মাটি কেটে ফেলা হচ্ছে। সম্প্রতি ফটিকছড়ির পাইন্দং ফকিরাচান এলাকায়। প্রবা ফটো
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর পাড় কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে বালু মিশ্রিত এসব মাটির বিশেষ চাহিদা রয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় কয়েকটি সিন্ডিকেট। এতে একদিকে উর্বর জমি বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে নদীভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। আর হুমকির মুখে পড়েছে হালদা জীববৈচিত্র্য।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের ফকিরাচান এলাকায় দুটি স্পটে মাটি কাটা হচ্ছে। এখানে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নদীর পাড়ে গভীর খাদ করা হয়েছে। এমএ ব্রিক ফিল্ড-১ এলাকায় মাটির গাড়ি যাতায়াতের জন্য নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী সেতুও। এ ছাড়া ইউনিয়নের পাট্টিল্যার কুল ও যুগিনীঘাটা এলাকায়ও হালদার পাড় কেটে ড্রাম ট্রাকে করে পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাটি। নির্বিচারে নদীর পাড় কাটার ফলে বিলীন হতে চলেছে বেড়িবাঁধ রক্ষায় নির্মিত ১৫৭ কোটি টাকার সিসি ব্লক। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। পাড় কাটা অংশ এতই গভীর ও প্রশস্ত যে, বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে অনায়াসে প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজনের অভিযোগ, অবৈধ মাটি কাটার এ কাজে জড়িত পাইন্দং ইউনিয়নের সাবেক সদস্য বদিউল আলম ও তার ছেলে মো. সাদ্দাম হোসেন। এ ছাড়া রয়েছে ওসমান, কাশেম, শফি ও আজগর নামে স্থানীয় কয়েকজনের সিন্ডিকেট। তাদের দুটি সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে নদীর পাড় কেটে গভীর খাদ তৈরি করছে। এসব মাটি পরিবহনের কারণে ফকিরাচাঁনসহ পাইন্দং ইউনিয়নের সড়কগুলোর বেহাল দশা। ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হচ্ছে স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে হালদার পাড় কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মামলা করলেও থামছে না পাড়া কাটা। তারা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কোঅর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার হালদা থেকে বালু উত্তোলন/মাটি কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যারা মাটি কেটে নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিাচ্ছি।’
জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই হালদার পাড় কাটা কিংবা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। যারা এ কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’