রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:০১ পিএম
রংপুরে কাঠ ও খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রবা ফটো
উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে ৪৪ জন দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে এসব অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- পীরগাছা উপজেলার গোয়ালু গ্রামের জালাল উদ্দিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৬৫) ও রংপুর নগরীর তাজহাট এলাকার বাসিন্দা নাসরিন বেগম (৩৫)। আলেয়া বেগম শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে এবং নাসরিন বেগম রবিবার সকালে মারা যান। দুজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ ম আখতারুজ্জামান।
এক সপ্তাহ ধরে রংপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। নিম্ন আয়ের মানুষজন খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, ১২ শয্যার ইউনিটে বর্তমানে ৪৬ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগী রয়েছে ৪৪ জন। বার্ন ইউনিটে এসব রোগীর সংকুলান না হওয়ায় তাদের হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। অনেকের শরীরের ৪০ শতাংশেরও বেশি পুড়ে গেছে।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অগ্নিদগ্ধ ববিতা রানীর স্বজনরা জানায়, ৯ জানুয়ারি বাড়িতে খড়কুটোর আগুন থেকে অগ্নিদগ্ধ হন ববিতা। তাকে প্রথমে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ববিতাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম থেকে আসা শিশু আয়শা আক্তারের মা শাহানা বেগম বলেন, ‘চুলার আগুনের উত্তাপ নিতে গিয়ে মেয়ে আগুনে দগ্ধ হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।’
লালমনিরহাট ভেলাগুড়ি এলাকা থেকে আসা অগ্নিদগ্ধ পলি বানীর (৩৫) শাশুড়ি আরতি রানী বলেন, ‘শীত থেকে বাঁচতে খড়কুটোর আগুনে আমার ছেলের বউ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। তার শরীরের অধিকাংশ স্থান পুড়ে গেছে। পোড়া রোগীর অনেক কষ্ট।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ ম আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বার্ন ইউনিটে বর্তমানে ৩০ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই রোগী নারী ও শিশু। আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়া এক বৃদ্ধা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। একশ শয্যার বার্ন ইউনিট নির্মাণের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে আধুনিক চিকিৎসা ও শয্যা সংকট কেটে যাবে। শীতজনিত কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন, শিশু বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের সেবা দেওয়ার।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাহ মোহাম্মদ আল মুকিত জানান, প্রতিবছরই উত্তরাঞ্চলে খড়কুটোর আগুনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ মারা যাচ্ছে। শীত নিবারণে আমরা সব সময় গরম কাপড় পরার পরামর্শ দিয়ে আসছি। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।