× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্থায়ী শুঁটকি পল্লীর অভাবে অন্ত নেই দুর্ভোগের

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৯ পিএম

প্রক্রিয়াকরণের নির্দিষ্ট স্থান না থাকায কুয়াকাটা সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। এতে ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। প্রবা ফটো

প্রক্রিয়াকরণের নির্দিষ্ট স্থান না থাকায কুয়াকাটা সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। এতে ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। প্রবা ফটো

কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই শুধু লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিষমুক্ত শুঁটকি। আর সমুদ্রপাড়ে খোলা আকাশের নিচে রোদের তাপে ও বাতাসে শুকিয়েই তা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। শুঁটকিপ্রেমীরাও উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত এ শুঁটকি কিনতে ছুটে আসছেন দূরদূরান্ত থেকে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় উৎপাদিত শুঁটকির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবে প্রক্রিয়াজাতকরণের নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় সৈকতের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। এতে ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি প্রক্রিয়করণ, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তাই স্থায়ী শুঁটকি পল্লী নির্মাণের দাবি ব্যবসায়ী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কর্মীদের। 

সবরেজমিনে দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ সহজলভ্য হওয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কুয়াকাটায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম। এ কাজে অংশ নেয় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ পরিবারের সদস্যরা। চলতি মৌসুমেও ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় লেম্বুর বন, নিজামপুর, গঙ্গামতি, ধুলাসার ঢোসসহ সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুকানো হচ্ছে শুঁটকি। আর এসব পল্লীতে দেখা মেলে পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্টা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙর, ভোল ও কোরালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির মাছের শুঁটকি। কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই শুধু লবণ মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের শুঁটকি মাছ। ফলে প্রতিনিয়ত শুঁটকি পল্লীতে ভিড় জমান পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুস্বাদু হওয়ায় কুয়াকাটার শুঁটকির আলাদা চাহিদা রয়েছে। তাই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জনপ্রিয়তা। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে শুঁটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। রংপুর থেকে আসা পর্যটক রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুঁটকিপ্রেমী, দেশের বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি খেয়েছি। কিন্তু কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনে এসেছি। ভ্রমণ শেষে শুঁটকি নিয়েছি। মেডিসিন ছাড়াই রোদে শুকানো হয়। এমনকি তেমন গন্ধও নেই।’ 

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জিন্নাত-জাহানারা দম্পতি বলেন, ‘বহুদিন ধরে অফিস কলিকদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনেছি। তাই কুয়াকাটায় এসেছি। এসে দেখলাম আসলেই প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তাই লইট্টাসহ কয়েক ধরনের শুঁটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি স্বজনদেরও উপহার দেব।’

তবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে স্থায়ী পল্লী না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ শুঁটকি শ্রমিকরা। বছরের ৬ মাস কাজ থাকে, বাকি ৬ মাস কর্মহীন থাকেন এখানকার শ্রমিক-ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা মৌসুমনির্ভর এ ব্যবসার স্থায়িত্বের পাশাপাশি স্থায়ী পল্লী নির্মাণ এবং এ শিল্পের পরিধি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সবার। 

লেম্বুর বন এলাকার শুঁটকি উৎপাদক হানিফ মিয়া জানান, সৈকতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শুঁটকি মাছের ব্যবসা করছেন। প্রতি বছরই তাদের বিভিন্ন কারণে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে তাদের অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়। এমনকি দোকানিদের চাহিদানুযায়ী মাছ শুকাতে পারছেন না। ফলে দোকানিরাও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। 

একই কথা জানান, কুয়াকাটার একাধিক শুঁটকি দোকানিরা। তারা বলছেন, যারা শুঁটকি তৈরি করে তাদের বার বার স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অনেক সময়ই পছন্দের শুঁটকির অভাবে ক্রেতাদের দেওয়া যায় না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে একটি স্থায়ী পল্লী স্থাপনের দাবি তাদের। 

শ্রমিক আব্দুর রায়হান বলেন, ‘শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার কোনো নির্ধারিত জায়গা না থাকায় আমরা সৈকতের পাশে মাছ শুকাই। অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযানে সবকিছু ভেঙে ফেলে। আবার শুঁটকি ব্যবসায় আসা কষ্টের হয়ে যায়।’

ঝাউবাগান এলাকার শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী নজির হাওলাদার বলেন, ‘নির্দিষ্ট স্থান থাকলে বর্ষা মৌসুমেও শুঁটকির ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু এখন তো আমাদের বছরের ৬ মাস অলস সময় কাটাতে হয়। তাই সরকারের কাছে একটি নির্দিষ্ট শুঁটকি পল্লী গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি।’ 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়া শাখার সদস্য সচিব মেজবাহ মাননু বলেন, শুঁটকি তৈরি করতে একটি নির্দিষ্ট জায়গা সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। কুয়াকাটায় পর্যটক আসলে শুঁটকির দুর্গন্ধে ভেগান্তি হয়। তা ছাড়া এভাবে শুঁটকি উৎপাদন করলে পরিবেশও দূষিত হয়।’

কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘সারা দেশে কুয়াকাটার শুঁটকির সুনাম রয়েছে। উন্নতমানের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য এই পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরকে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।এ ছাড়া স্থায়ী শুঁটকি পল্লী নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা