সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৭ পিএম
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের পাশেই মইন্নার টেকে বনের বাগানের মধ্যে পাহাড় কাটা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
পরিবেশ আইনে পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে একটি চক্র। এসব মাটি স্থানীয় মানুষের বসতভিটা ভরাটে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় মোক্তার ও আলমগীরের নেতৃত্বে একটি চক্র। এদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে একাধিক ব্যক্তি মাটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তাই চক্রটি রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পদুয়া রেঞ্জের আওতাধীন উপজেলার বাজালিয়া বড়দুয়ারা বন বিট কার্যালয়ের এক কিলোমিটারের মধ্যে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের পাশেই মইন্নার টেকে বনের বাগানের মধ্যে নির্বিচারে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। বিট কার্যালয়ের নাকের ডগায় নিয়মিত পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করলেও বন বিভাগের লোকজন খবর পায় অধিকাংশ পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে গেলে। বড়দুয়ারা মইন্নার টেক এলাকায় গত এক সপ্তাহ পাহাড় কাটার পর পদুয়া রেঞ্জের কর্মকর্তার নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দুটি ডাম্পার ট্রাক জব্দ ও তিনজন শ্রমিককে আটক করে বন আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত সুনির্দিষ্ট এমন কাউকে আটক করতে না পারলেও মামলা একটি দিয়ে বন বিভাগ দায় সেরেছে। বন বিভাগের অভিযানের পরেও সেখানে নিয়মিত পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে যাচ্ছে অসাধু পাহাড়খেকোরা।
দেখা গেছে, বনের বাগানের মাঝ দিয়ে অস্থায়ী সড়ক বানানো হয়েছে। সড়ক দিয়ে পাহাড়ের উত্তর পাশ থেকে দক্ষিণ মুখে মাটি কাটা হয়েছে এক্সকাভেটর দিয়ে। বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ নিধন করে পাহাড়ের এক পাশ থেকে মাটি কেটে কয়েক হাজার বর্গফুট করা হয়েছে সমতল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাজালিয়া এলাকায় যেভাবে নির্বিচারে ও অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে তা জনজীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। বনের ভেতর পাহাড় কেটে তারা বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে সেখানে স্থায়ী ঘর নির্মাণ করে। পাহাড়ে যেসব বাড়িঘর রযেছে, ভারী বর্ষণে যেকোনো মুহূর্তে ধসে যেতে পারে। এতে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
বাজালিয়া বড়দুয়ারা বন বিট কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বলেন, ‘তারা এখানকার প্রভাবশালী। তবে আমরা জানি কারা এসব পাহাড় কাটে। তাদের সঙ্গে কিছু খারাপ লোকজন থাকে।’
পদুয়া রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, বাজালিয়া বড়দুয়ারা এলাকায় পাহাড় কাটার খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। আমাদের বন বিভাগের অভিযানে দুটি ডাম্পার ট্রাকসহ তিনজনকে আটক করে বন আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বন আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। এখনও যদি পাহাড় কাটার খবর আসে আবারও অভিযান চালানো হবে।
বাংলাদশে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার জানান, পাহাড় কাটা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনে স্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট হয় এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। ফলে ঘটে মারাত্মক ভূমিধস। তিনি বলেন, ‘সাতকানিয়ার বাজালিয়ায় পাহাড় কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’