মাহাবুবুর রহমান মিঠুন, ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:২৯ এএম
আমজাদ হোসেন
ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের পাশে ডাকবাংলোসংলগ্ন তিনতলা ভবনে ‘তরঙ্গ ইলেকট্রনিকস’ নামে একটি ইলেকট্রনিকের দোকান। দোকানটির মালিক আমজাদ হোসেন পেশায় সাধারণ ইলেকট্রিশিয়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডিগ্রি ছাড়াই আইপিএস তৈরি ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকসের কাজ করেন তিনি। তবে এবার শুধু আইপিএস নয়, নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন লিফট। যা রীতিমতো এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। ভবনের তিনতলা দোকানে ওঠানামা করতেই মূলত এ লিফট তৈরি করেছেন তিনি, যা এখন পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমজাদের দক্ষতা দিয়ে তৈরি করা এ লিফট বিদ্যুৎ ছাড়াও আইপিএসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে।
আমজাদ হোসেন (৬৩) উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। বৃদ্ধ বয়সে আমজাদের অভাবনীয় এ উদ্ভাবনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তার তৈরি করা লিফট দেখতে বা একটু চড়তে অনেকেই তার দোকানে ভিড় করছেন।
জানা গেছে, আমজাদ হোসেন পাবনা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রিক বিষয়ে দুই বছরের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে আইপিএস, চার্জার লাইট, বৈদ্যুতিক মোটর, ব্যাটারির চার্জার, ফ্রিজের ভোল্টেজ স্ট্যাবেলাইজারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রী তৈরি করছেন। একসময় টিভি ও ফ্যান মেরামতের কাজও করেছেন। তিন বছর আগে ঈশ্বরদী পৌর শহরের ডাকবাংলোর সামনে এক শতক জমিতে ইলেকট্রিক সামগ্রী বেচাকেনার জন্য একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় ওঠানামার জন্য ভবনের পেছন দিক দিয়ে একটি সিঁড়ি রয়েছে। এ সিঁড়ি দিয়ে ক্রেতাদের ওঠা-নামা করতে অসুবিধা হয়। এ ছাড়া দোকানের মালামাল ওঠানামা করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সমস্যা দূর করতে একটি লিফট তৈরির পরিকল্পনা করেন আমজাদ হোসেন।
তবে শুরুতে বিষয়টি এত সহজ ছিল না। প্রায় তিন মাস এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে লিফট তৈরির জন্য একটি কন্ট্রোল বক্স, এক টন ওজন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গিয়ার বক্স, এক কিলোওয়াটের আইপিএস ও এক হর্স পাওয়ারের মোটর তৈরি করেন। এরপর স্টিলের ওয়্যার, মেটাল স্ট্রাকচার ও কেবিনের জন্য রিপ্লেকা গ্লাস দিয়ে লিফট তৈরির কাজ শুরু করেন ইলেকট্রিশিয়ান আমজাদ হোসেন। প্রায় তিন মাস প্রচেষ্টার পর দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে দোকানের সামনে তিনতলায় ওঠানামার জন্য এ লিফট তৈরি করতে সক্ষম হন।
লিফট তৈরির বিষয়ে আমজাদ হোসেন বলেন, তিনতলা দোকানে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে কষ্ট হয়। সিঁড়িটি দোকানের পেছন দিক দিয়ে হওয়াতে মালামাল ওঠানামা করতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম সহজ উপায়ে কীভাবে তিনতলায় ওঠানামা করা যায়। পরে লিফটের কথা ভেবে কাজ শুরু করি। বর্তমানে এ লিফট পরীক্ষামূলকভাবে চালাচ্ছি। এটি নিরাপদ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এখন এটিকে কীভাবে আরও আধুনিক করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। আমার উদ্ভাবিত এ লিফট তৈরির বিষয়টি সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের জানাব। পাশাপাশি ইলেকট্রিক প্রকৌশলীদের পরামর্শ নেব। স্বল্প খরচে নির্মিত এ লিফট যদি তিন ও চারতলা ভবনে ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করার অনুমতি সরকার আমাকে দেয়, তাহলে আমি এটি তৈরি করব।
লিফট দেখতে আসা স্থানীয় কয়েকজন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেখছিলাম এটি তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আমজাদ হোসেন। দোকানের কাজে ব্যবহার করতে নিজ হাতে লিফট বানিয়ে সেটা চালাচ্ছেন; এটা খুব আশ্চর্য লেগেছে আমাদের কাছে। তাই লিফটি দেখতে ও একটু চড়তে এসেছি। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করলে তিনি আরও এগিয়ে যাবেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, আমজাদ হোসেন দেশীয় প্রযুক্তিতে লিফট তৈরি করেছেন। এটি খুব ভালো উদ্যোগ। তার এ উদ্ভাবন কীভাবে বাণিজ্যিকীকরণ করা যায় এবং আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়ে সরকারি উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করব।