মন্ত্রিসভা
আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফেনী
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৯ এএম
বাঁ থেকে নাসিম চৌধুরী ও নিজাম উদ্দিন হাজারী। প্রবা ফটো
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পাঁচ পাঁচবার সরকার গঠন করলেও একবারও কেউ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি খালেদা জিয়ার জেলা ফেনী থেকে। এবার আশপাশের জেলা কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী মন্ত্রী পেলেও বরাবরের মতো বঞ্চিত ফেনী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ যতবারই সরকার গঠন করেছে, বরাবরই ফেনী উপেক্ষিত থেকেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে মন্ত্রী হলেও ফেনী স্থান পায়নি। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত সরকারে ফেনী-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাফর ইমাম বীর বিক্রম মন্ত্রী হন। এরপর জাতীয় পার্টির আমলেও তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময়ে তার হাত ধরে ফেনীর ব্যাপক উন্নয়ন হয়।
কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্ষমতাসীর দলের নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলেন, ফেনীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সারা দেশের তুলনায় ফেনী অনেক পিছিয়ে আছে এবং অবহেলিত হচ্ছে।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ফেনী-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০১ সালেও ফের প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। অবশ্য ওই বছর তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে তার ছোট ভাই মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দর সংসদ সদস্য হন। এরপর ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন সাবেক আইজিপি আনোয়ারুল ইকবাল ও ড. চৌধুরী সাজ্জাদুল করিম। এরপর আর মন্ত্রী পায়নি ফেনী।
২০০৮ সাল থেকে টানা চারবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সাল থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতিতেও তার প্রভাব দৃশ্যমান। নেতাকর্মীদের আশা ছিল, সংসদ সদস্য পদে হ্যাটট্রিকের পর তাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে স্থানীয় নেতারা এমন দাবিও তুলেছিলেন।
এদিকে ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় মন্ত্রিসভার পুনর্গঠনে আলোচনায় আসেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। একসময়ের ছাত্রলীগের তুখোড় এ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার থাকাকালে এবং পরবর্তী সময়ে নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এবার তিনি ফেনী-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে গুঞ্জন আরও জোরদার হয়। স্বয়ং চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ অনেকেই তার নির্বাচনী প্রচারণায় জোর দিয়ে বলেছিলেন, নাসিম চৌধুরী এমপি হলে মন্ত্রী হবেন। এলাকাবাসীরও আশা ছিল, দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী এ নেতাকে মূল্যায়ন করা হবে। সেই সঙ্গে ফেনীর উন্নয়নও আরও গতি পাবে। কিন্তু সদ্য গঠিত মন্ত্রিসভায় তাকে না দেখে হতাশ হয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে গঠিত মন্ত্রিসভায় ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে এর কলেবর আরও বাড়ানো হতে পারে। ইতঃপূর্বেও কয়েক দফায় মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণ করা হয়। সেক্ষেত্রে নাসিম চৌধুরীকে মন্ত্রিপরিষদে দেখার আশা এখনও করছেন ফেনীবাসী।