× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চট্টগ্রামে পোশাক শিল্প নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৮ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২৩ সালের মধ্যভাগ থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রয়াদেশ কমতে থাকে। সঙ্গে রয়েছে গ্যাস সংকট এবং চাহিদামতো বিদ্যুতের সংকট। নতুন করে যুক্ত হয়েছে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ। গত ২০ ডিসেম্বর তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। ওই বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে পোশাক কারখানা মালিকরা। নতুন কাঠামোয় একজন শ্রমিকের প্রারম্ভিক বেতন সাড়ে চার হাজার টাকা বাড়ানো হয়। কিন্তু অভিজ্ঞ শ্রমিকদের একই পরিমাণ বেতন না বাড়ায় বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। একই হারে বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। 

চট্টগ্রামে শ্রমিকদের দাবির মুখে সকল শ্রমিকের একই হারে বেতন বাড়িয়েছে প্যাসিফিক জিন্স, এইচকেডি, মেরিম কো লিমিটেডসহ কয়েকটি কারখানায়। এসব কারখানা বেতন বাড়িয়ে দেওয়ায় অন্য কারখানার শ্রমিকরাও একই হারে বেতন দাবি করছেন। তারা বলছেন, কারখানার সকল শ্রমিকের বেতন যদি ৪ হাজার টাকা বাড়ানো হয়, যার গড় হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। কোনো কারখানায় ১০ হাজার শ্রমিক থাকলে মাসিক বেতন-ভাতা বেড়ে যাবে ৪ কোটি টাকা। 

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘নতুন এই সংকট সৃষ্টির পেছনে ইয়ংওয়ান কারখানা বেশি দায়ী। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি তার কারখানার সকল শ্রমিক-কর্মকর্তার বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ধিত বেতনের সঙ্গে এটি ঘোষণা দেওয়ায় অন্য শ্রমিকরা এটিকে কেন্দ্র করে ইয়ংওয়ানের সমপরিমাণ বেতন দাবি করছে। সরকার যে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটি পোশাক কারখানা মালিকরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী বাড়তি বেতন বাস্তবায়ন করতে হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।’

রাকিবুল আলম চৌধুরী আরও বলেন, এটি কেউ মানতে পারবে না। একটি কারখানায় যদি ১০ হাজার শ্রমিক থাকে। তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে মাসে বেতন-ভাতা বাবদ খরচ বেড়ে যাবে ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। গ্যাস সংকট, ক্রয়াদেশ কমের কারণে এখন কারখানাগুলো এমনিতে কঠিন সময় পার করছে। এসব সমস্যার সঙ্গে বাড়তি এই বেতন যোগ হলে কারখানায় উৎপাদন চালু রাখা কঠিন হবে।

চট্টগ্রাম ইপিজেড সূত্রে জানা যায়, ইয়ংওয়ানের উদাহরণ দিয়ে সকল শ্রমিকের বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে বাড়ানোর দাবিতে চট্টগ্রাম ইপিজেডে প্রথম বিক্ষোভ করে প্যাসিফিক জিন্সের এনএসটি ফ্যাশনের শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবির মুখে মালিকপক্ষ মেনে নেয়। পরদিন এইচকেডি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আরএসবি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, জেজে মিলস, মেরিম কো. লিমিটেড, এমজেডএম লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করে। শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ায় অন্য কারখানাগুলোর শ্রমিকরাও একই হারে বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইপিজেডর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, গত তিন দিনে ইপিজেডে অন্তত ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা একই হারে বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। আমরা শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কারখানা মালিক শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছেন।’

সরকার নির্ধারিত বর্ধিত বেতন কাঠামো ইতোমধ্যে কার্যকর করেছেন বলে জানান চট্টগ্রামের ইপিজেডের পোশাক কারখানা মালিকরা। বিষয়টি শ্রমিকরাও স্বীকার করেছেন। তবে অভিজ্ঞ শ্রমিকদের অভিযোগ, বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। কারখানায় এন্ট্রি পর্যায়ের একজন শ্রমিকের বেতন যেই হারে বাড়ানো হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সেই হারে বেতন বাড়ানো হয়নি।

ওই প্রজ্ঞাপনে যেসব শ্রমিক ইতোমধ্যে ন্যূনতম মজুরি সীমা অতিক্রম করেছেন এমন অভিজ্ঞ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বা পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। প্রজ্ঞাপনে নির্ধারিত না থাকার কারণে এখন ইয়ংওয়ান তাদের শ্রমিকদের প্রত্যেকের একই হারে বাড়িয়ে দেওয়ায় সেটিকে অজুহাত দেখিয়ে একই বেতন দাবি করছেন চট্টগ্রাম ইপিজেডের অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করায় কারখানায় এন্ট্রি লেভেলে একজন শ্রমিকের বেতন বেড়ে যায় প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে কারখানায় ৭/৮ বছর ধরে কাজ করা অভিজ্ঞ সিনিয়র অপারেটরদের বেতন বেড়েছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। সহকারী অপারেটরদের বেতন বাড়ানোর সঙ্গে সিনিয়র অপারেটরদের বেতন একই হারে না বাড়ানোর কারণেই সিনিয়র শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। 

চট্টগ্রাম ইপিজেডের একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, নতুন কাঠামো অনুযায়ী বেতন বাড়ানোর পর কারখানায় যারা বছর খানেক কাজ করছেন ওই শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে চার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু যারা কারখানায় আট থেকে ১০ বছর কাজ করেছেন তাদের বেতন সেই হারে বাড়েনি। অভিজ্ঞ এসব শ্রমিকের বেতন বাড়ানো হয়েছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেরিম কো লিমিটেডের এক শ্রমিক বলেন, আমি ৫ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছি। বেতন পাচ্ছি সাড়ে ১৪ হাজার টাকার, আর ছয় মাস আগে যে জয়েন করছে তার বেতন এখন ১৪ হাজার টাকা। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী তার বেতন বেড়েছে চার হাজার টাকার মতো, কিন্তু আমার বেতন বেড়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এক হাজার টাকা বেতন বাড়ালে আমরা চলব কীভাবে? সব শ্রমিকের যেন একই হারে বেতন বাড়ানো হয় আমরা সে দাবি জানিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা