কাপ্তাই হ্রদ
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭ এএম
দুচিন্তায় দিন কাটছে রাঙামাটির অন্যতম মৎস বিপণনকেন্দ্র কাপ্তাই ফিশারিঘাটের ব্যবসায়ীদের। প্রবা ফটো
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে ষাটের দশকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাঁধ দেওয়ায় ৩৬৫ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় হ্রদের। প্রথমদিকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন মূল উদ্দেশ্য থাকলেও পরে এই হ্রদ হয়ে ওঠে স্থানীয় অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস। একসময় কাপ্তাই হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছের দেখা পাওয়া গেলেও বর্তমানে কমেছে সেই জৌলুস। একই সঙ্গে হারিয়ে গেছে অনেক প্রজাতির মাছও। সংকটে পড়েছে হ্রদের ওপর নির্ভরশীল মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি রাঙামাটির অন্যতম মৎস্য বিপণনকেন্দ্র কাপ্তাই ফিশারিঘাটে গিয়ে কথা হয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। অধিকাংশ মৎস্য ব্যবসায়ী ও কর্মচারী জানান, শীতের মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পরিমাণ কম থাকলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি কমেছে মাছের পরিমাণ। বর্তমানে হ্রদে যে অল্প পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে তন্মধ্যে ছোট মাছের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে কাচকি, চাপিলা, মলা-ঢেলা জাতের মাছ। বৃহৎ আকারের তেমন কোনো মাছ একদম ধরা পড়ছে না। এতে হতাশ হয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন অনেক ব্যবসায়ী।
কাপ্তাই ফিশারিঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী জামাল জানান, বর্তমানে ব্যবসা এতটাই মন্দ যাচ্ছে যে, ব্যবসা চালিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাছ ধরা পড়ছে অনেক কম। এতে আয় রোজগার কমে গেছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতেও কষ্ট হচ্ছে। এ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের দুর্দিন চলছে। হতাশ অনেক ব্যবসায়ী অন্য পেশায় জড়িয়ে গেছেন।
কাপ্তাই হ্রদে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী ও কর্মচারী বলেন, বছরের শীত মৌসুমে লেকে মাছের পরিমাণ কমে আসে, তবে এতটা পরিমাণ কখনও কমে না। তারা সবাই মাছ কমার কারণ হিসেবে কাপ্তাই লেকের নাব্য সংকটকে দুষছেন। বৃহৎ আকারের বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন পয়েন্টে গভীরতা কমে গেছে। যেখানে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ার জায়গা সেখানেই পলি ভরাট ও নাব্য সংকটে মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি ভরা মৌসুমেও মাছের প্রজনন কেন্দ্রে পানির পরিমাণ থাকে কম। পাশাপাশি বিভিন্ন বজ্য আবর্জনার বিষাক্ত পদার্থে লেকের পানি দূষিত হচ্ছে। এতে মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ১৯৯১ সালে কাপ্তাই হ্রদে দুই প্রজাতির চিংড়ি, দুই প্রজাতির কচ্ছপ ছাড়াও ৭১ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল ছিল। এর মধ্যে ৬৬ প্রজাতি ছিল দেশি এবং ৫ প্রজাতি ছিল বিদেশি মাছ। এরপর ২০০৬ সালে সর্বশেষ মাছের শুমারি করা হয়, সেই তথ্যানুযায়ী বর্তমানে হ্রদে ৬২ প্রজাতির মাছ রয়েছে। তন্মধ্যে ৫২ প্রজাতির দেশি এবং বিদেশি মাছ ১০ প্রজাতির। বাকিগুলো আস্তে আস্তে কাপ্তাই হ্রদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
কাপ্তাই ফিশারিঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) কর্মচারী মো. সাকাওয়াৎ হোসেন জানান, কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা শুরুর পর থেকে প্রথমদিকে ভালো পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত। তবে দিন-দিন কাপ্তাই লেকে মাছের পরিমাণ কমছে।
তিনি জানান, গত ১ মাস আগেও কাপ্তাই লেকে ভালো মাছ পাওয়া গিয়েছিল, তবে বর্তমানে অনেকটা কমেছে। আশা করা যাচ্ছে শীত মৌসুম চলে গেলে কাপ্তাই লেকে আবারও মাছের পরিমাণ বাড়বে।
১৯৯১ সালে কাপ্তাই হ্রদে দুই প্রজাতির চিংড়ি, দুই প্রজাতির কচ্ছপ ছাড়াও ৭১ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল ছিল। এর মধ্যে ৬৬ প্রজাতি ছিল দেশি এবং ৫ প্রজাতি ছিল বিদেশি মাছ। বর্তমানে হ্রদে ৬২ প্রজাতির মাছ রয়েছে। তন্মধ্যে ৫২ প্রজাতির দেশি এবং বিদেশি মাছ ১০ প্রজাতির।