মাদারীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৭ পিএম
আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:৩০ পিএম
মাদারীপুরে দুইপক্ষের সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রবা ফটো
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে ১২ পুলিশসহ আহত হয়েছে অন্তত ৩৫ জন। সংঘর্ষের সময় অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণসহ ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় পৌরসভার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সাত জনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টা মাদারীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর খাগদী এলাকায় এ সংঘর্ষ চলে।
আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম সরদার, উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম, এএসআই মাসুদ বেপারী, কনস্টেবল মনোয়ার হোসেনের নাম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া চরখাগদী এলাকার আসাদ চৌকিদার ও তামিম মৃধার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানায়, মাদারীপুর পৌরসভার চরখাগদী এলাকার সাবেক কাউন্সিলর খলিল বেপারীর চাচাতো ভাই সীমান্ত বেপারী বুধবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল নিয়ে চরমুগরিয়া বাজারে যাচ্ছিল। তার মোটরসাইকেলটির সঙ্গে একই এলাকার আশিক মৃধার ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মেটাতে দুপক্ষের লোকজন চরমুগরিয়া বাজারের মতিন মৃধার দোকানে বসেন। সেখানে সালিশ চলার সময় দুপক্ষের বাকবিতণ্ডায় একই এলাকার রাতুল বেপারীকে মারধর করেন সজল মৃধা।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেপারী ও মৃধা বংশের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টার সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০টি বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সংঘর্ষে থানা পুলিশের পরিদর্শক সেলিম সরদারসহ ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ ছাড়া উভয়পক্ষের আরও ২৩ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে সদর হাসপাতালে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তৈয়ব হাওলাদারের স্ত্রী নাদিরা আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করে শুনি মারামারি লাগছে, আমাদের ঘরের পুরুষ লোক দেশের বাইরে থাকে। ঘরের থাই গ্লাসগুলো ভেঙ্গেচুরে চুরমার করেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেনের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ছোট ছেলে-মেয়ে রয়েছে। আমরা নারীও থাকি। সবার মাঝে এখন নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। এমন সংঘর্ষ হলে কিভাবে বসবাস করব।’
আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘ঘর থেকে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। যেখানে যা আছে, সবকিছুই নিয়ে গেছে। ঘরের ভেতর ঢুকে নারী সদস্যদেরও মারধর করেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম সরদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঠিক তখনই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে দুইপক্ষই। এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছুড়তে হয়।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএস সালাউদ্দিন বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় মাদারীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল বাশার বেপারীসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটিপক্ষ এই সংঘর্ষে জড়ায়। যারা সরাসরি এই ঘটনায় জড়িত ছিল সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’