রাঙামাটি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৪৯ পিএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৯ পিএম
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল ২০২৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) দলটির প্রচার সম্পাদক নিরণ চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করে দলটি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, ঠ্যাঙাড়ে, জেএসএস ও অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের হাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে ২৫ জন। গত বছর গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৯ জন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২১ জন, অপহৃত হয়েছে ৪৩ জন ও যৌন সহিসংতার শিকার হয়েছে ২৩ জন নারী-শিশু। এ ছাড়া ১৪ জন গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে, ১৩টি স্থানে ভূমি বেদখল অথবা বেদখলের চেষ্টা হয়েছে। পাহাড়িদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে সাতটি, ধর্মীয় পরিহানির ঘটনা ঘটেছে তিনটি, হয়রানির শিকার হয়েছে পাঁচজন।
গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ৯টি, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বেপরোয়া গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ছয়টি, যাতে চারজন নারী-পুরুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় এবং সেনাবাহিনীর কম্বিং অপারেশনের কারণে অন্তত ৮২টি পাহাড়ি পরিবারের লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির বর্তমান বিশেষত্ব হচ্ছে নিপীড়িত-নির্যাতিত অধিকারহারা জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি নব্যমুখোশ বাহিনী, মগপার্টি, সংস্কারবাদীর মতো ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর ব্যবহার। এদের মাধ্যমে আন্দোলনের নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থকদের খুন, গুম, অপহরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। এই বাহিনীগুলো ছাড়াও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সন্তু গ্রুপও প্রায় সময় সাধারণ জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গ্রেপ্তার, শারীরিক নির্যাতন, তল্লাশি-হয়রানি, ধর্মীয় পরিহানি, নারী নির্যাতন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, হামলা, ভূমি বেদখল ইত্যাদি।
রিপোর্টে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়, গত বছর নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে একজন সাধারণ নাগরিক, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইউপিডিএফ সদস্যসহ অন্তত ৪৯ জনকে, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯ জন, বেআইনি তল্লাশি চালানো হয়েছে ১৪ গ্রামবাসীর বাড়িতে, হেনস্থা-হয়রানির শিকার হয়েছে নারীসহ পাঁচজন, নিরাপত্তা বাহিনী ও বিজিবির গুলিতে আহত হয় দুজন, গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে আটটি, ধর্মীয় পরিহানির ঘটনা ঘটেছে তিনটি। এ ছাড়া বিজিবি কর্তৃক নাইক্ষ্যংছড়িতে গ্রামবাসীদের ওপর হামলা, সাজেকে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের জমি দখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে এবং বান্দরবানে কুকি-চিন আর্মি দমনের নামে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচালিত কম্বিং অপারেশনের কারণে বম জাতিগোষ্ঠীর ৮২টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উপজেলা সদরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
জেএসএস সন্তু গ্রুপের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, জেএসএস সন্তু গ্রুপও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। গত বছর তারা ইউপিডিএফের এক সদস্যকে হত্যা, বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া এক ছাত্রীসহ পাঁচজনকে অপহরণ, চারজনকে শারীরিক নির্যাতন ও রাঙামাটিতে সমাবেশে বাধা দিয়েছে।